বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
জায়গা নেই বেনাপোল বন্দরে

খোলা আকাশের নিচে শত শত কোটি টাকার গাড়ি

বকুল মাহবুব, বেনাপোল (যশোর)

খোলা আকাশের নিচে শত শত কোটি টাকার গাড়ি

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের গুরুত্ব বাড়লেও অবকাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। রয়ে গেছে মান্ধাতা আমলের কার্যব্যবস্থা। বন্দরকে করা হয়নি আধুনিক। দিন দিন নানা সমস্যা বাড়ছেই। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। কাগজে-কলমে উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে বেনাপোল বন্দরে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এ বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। এ ছাড়া বছরে প্রায় ১৩ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হয় এ বন্দর দিয়ে। এর মাধ্যমে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব জমা হচ্ছে সরকারি কোষাগারে। অন্যদিকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরে জায়গা সংকটের কারণে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে বিভিন্ন ধরনের মেশিনারিজ, গাড়ি, কেমিক্যালসহ শত শত কোটি টাকার পণ্য। নষ্ট হচ্ছে পণ্যের গুণগত মান। বন্দরের শেডে জায়গা না থাকায় বাইরে রেললাইনের পাশের গর্তে পড়ে আছে ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। আমদানি করা পণ্য রাখার শেডগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। দেড় যুগ আগের পুরনো ও জরাজীর্ণ শেড ও ইয়ার্ড দিয়ে চলছে বেনাপোল বন্দরের কাজ। আমদানি পণ্য লোড-আনলোডের জন্য ভাড়া করা অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট নষ্ট থাকায় বিঘ্ন ঘটছে খালাসের কাজে। জায়গা সংকট ও লোড-আনলোডের যান্ত্রিক সমস্যায় বৃহত্তম এ বন্দরে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ পণ্যজট। এদিকে বন্দরের ভিতর নতুন শেড নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা মালামাল রাখার জন্য ৪০টি শেড রয়েছে, যার অধিকাংশের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ওপেন ইয়ার্ড পাঁচটি, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড একটি, ট্রাক টারমিনাল আমদানি দুটি ও রপ্তানি একটি। এসব গুদামে পণ্য ধারণক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সব সময়ই বন্দরে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন পণ্য মজুদ থাকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ মালামাল ঝুঁকি নিয়ে রাখা হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে। এমনকি ট্রাক টারমিনালে বিপজ্জনক দাহ্য পণ্য রাখা হচ্ছে। জায়গা সংকটে কয়েকশ ভারতীয় ট্রাক মালামাল নিয়ে বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে রাস্তার ওপর। সেগুলোর পণ্য রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট আর সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। এদিকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি গতিশীলতা বাড়াতে বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোলে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট। এক থেকে দেড় হাজার ট্রাক রাখার ব্যবস্থাসহ সব সুবিধা এখানে রয়েছে। পণ্যজটের কারণে বেনাপোল বন্দরে প্রতিদিন প্রবেশের অপেক্ষায় থাকছে ভারতের পেট্রাপোল ও বনগাঁ কালিতলায় শত শত ট্রাক। বন্দরের নানা সমস্যার কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারত সরকার আধুনিক চেকপোস্টসহ নানা সুবিধার ব্যবস্থা করেছে বেনাপোলের পার্শ্ববর্তী ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে। অথচ বেনাপোলে লাগেনি কোনো আধুনিকায়নের ছোঁয়া। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মফিজুর রহমান সুজন বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর এ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। স্থলবন্দরটি খুবই অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার বন্দরে প্রতিদিন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন পণ্য ওঠানো-নামানো হয়ে থাকে। প্রতিদিন পণ্যবোঝাই অন্তত ৩৫০টি ট্রাক লোড-আনলোডের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ধীরে ধীরে বন্দরটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ বন্দরকে আরও গতিশীল করে তোলার জন্য প্রথমেই দূর করতে হবে জায়গার সংকট। জায়গা সংকটের কারণে অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। শত শত কোটি টাকার পণ্য খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে ভারত থেকে পণ্য প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের জন্য ৮ থেকে ১০ দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়। তিনি বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরকে বাণিজ্যের উপযোগী করে তুলতে এর ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বাড়াতে হবে বন্দরের অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট। জরুরি ভিত্তিতে ওষুধশিল্পের কাঁচামাল রাখার জন্য একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামসহ ১৫টি শেড নির্মাণের দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে বন্দরটির কর্মচাঞ্চল্য কমতে কমতে এটি শিগগিরই অচল হয়ে পড়বে। বেনাপোল স্থলবন্দর উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম বলেন, ‘এ বন্দরে ১০০ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। নতুন দুটি শেড, ফ্লোর পাকাকরণ, ড্রেন নির্মাণসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। সাময়িক কিছু সমস্যা আছে। কাজ শেষ হলে বন্দরে কোনো সমস্যা থাকবে না। বন্দরে পণ্যজটও কমে যাবে বলে আশা করছি।’

 

সর্বশেষ খবর