বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

চোখে জল আতিয়া মহলের বাসিন্দাদের

খোয়া গেছে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

চোখে জল আতিয়া মহলের বাসিন্দাদের

ভাঙা আতিয়া মহল থেকে গতকাল জিনিসপত্র নেন বাসিন্দারা

জঙ্গি আস্তানা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ীর বহুল আলোচিত আতিয়া মহলটি অবশেষে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে বাড়ির মালিক উস্তার আলীর কাছে আতিয়া মহলের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর ভাড়াটেরা প্রবেশ করেন ভিতরে। কিন্তু বাড়িতে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র না পেয়ে তারা ভেঙে পড়েন।

আতিয়া মহলের ভিতর জঙ্গিদের রাখা বিস্ফোরক উদ্ধার শেষে সোমবার ভবনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব। এর আগে টানা আট দিন র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ভিতরে অভিযান চালায়। অভিযানকালে ভিতর থেকে উদ্ধার করে দুই জঙ্গির লাশ, নয়টি তাজা বোমা ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম। র‌্যাবের কাছ থেকে পাঁচতলা ভবনটির দায়িত্ব পাওয়ার পর গতকাল সকালে আতিয়া মহলে সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ— সিআইডির ক্রাইম সিন দল। পরীক্ষা শেষে সকাল ১০টায় আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলীর কাছে ভবনটির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় তারা। এরপর ভাড়াটেদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ভবনটি। ভবনের ভিতর ঢুকে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফ্ল্যাটগুলোর অনেক বাসিন্দা। তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খুঁজে পাননি রেখে যাওয়া অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র। ফ্ল্যাটের মধ্যে যে জিনিসপত্র রয়েছে সেগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা শাহানা বেগম থাকতেন আতিয়া মহলের তৃতীয় তলার ১৩ নম্বর ফ্ল্যাটে। তিনি জানান, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ভিতরে স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে গিয়েছিলেন। ভিতরে ঢুকে পুরো ফ্ল্যাট শূন্য পেয়েছেন। স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, খাট, স্টিলের আলমারিসহ ব্যবহার্য কোনো কিছুই ফ্ল্যাটের ভিতর নেই। শাহানার মতো একই অবস্থা অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের। একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম থাকতেন দ্বিতীয় তলার ৭ নম্বর ফ্ল্যাটে। তিনি জানান, তার বাসা থেকে তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৩০ হাজার টাকা, ফ্রিজ ও টেলিভিশন খোয়া গেছে। আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলী মনে করেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে অনেক ফ্ল্যাটের দেয়াল ভেঙে কমান্ডোরা ভিতরে ঢুকেছেন। ভবনজুড়ে ছিল ধ্বংসস্তূপ। এগুলো সরানোর সময় নিচতলার ভাড়াটেদের জিনিসপত্র খোয়া যেতে পারে। তবে বেশির ভাগ ভাড়াটে তাদের জিনিসপত্র বুঝে পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে পাঁচতলা ভবনটি তৈরি করায় অভিযানের পর তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব যে দাবি করেছে তা অস্বীকার করেন উস্তার আলী। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি ভবনটি করেছেন। ভবন নির্মাণকালে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তাই বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি তার। আতিয়া মহলকে নিরাপদ ঘোষণা করে মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হলেও ভাড়াটেরা তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত পুলিশ প্রহরা থাকবে বলে জানান স্থানীয় মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খায়রুল ফজল। তিনি বলেন, ভবনটি এখন বসবাসের অনুপযোগী। ভবনের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অভিযানের সময় উড়ে গেছে ভবনের বিভিন্ন অংশ। পুরো ভবন এখন বলতে গেলে একটি ধ্বংসস্তূপ। তাই আপাতত এটি ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে না। প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আতিয়া মহল ঘিরে রাখে পুলিশ। বিকালে অভিযানে অংশ নেয় সোয়াত। কিন্তু ভিতরে প্রশিক্ষিত জঙ্গি, বিস্ফোরক এবং ভাড়াটেরা অবস্থান করায় শেষ পর্যন্ত সোয়াত অভিযানে নামেনি।

 পরদিন সকাল থেকে অভিযানে নামেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। প্রথমে তারা ভবনটির ২৯টি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেন ৭৮ বাসিন্দাকে। এরপর শুরু হয় জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই। শেষ পর্যন্ত প্যারা-কমান্ডোদের সাঁড়াশি অভিযানে নিহত হয় ভিতরে থাকা চার জঙ্গি। জঙ্গি নিধনের পর সেনাবাহিনী আতিয়া মহল বুঝিয়ে দেয় র‌্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে। টানা আট দিনে ‘অপারেশন ক্লিয়ার আতিয়া মহল’ শেষ করে সোমবার পুলিশের কাছে এটি হস্তান্তর করে র‌্যাব।

সর্বশেষ খবর