বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

তদন্তের ফল শূন্য দুই বছরেও

মাহবুব মমতাজী

তদন্তের ফল শূন্য দুই বছরেও

প্রায় দুই বছর ধরে তদন্তে ঘুরপাক খাচ্ছে রাজধানীর পল্লবীর আলোচিত জোড়া খুনের মামলাটি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ কাজের ফল শূন্য। তদন্তকারীরা সন্দেহের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও খুনের মোটিভ ও খুনি সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি।

২০১৫ সালের ১৩ মে খুন করা হয় সুইটি আক্তার ও তার মামাশ্বশুর আমিনুল ইসলামকে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুইটির সাত বছরের শিশু সন্তান সাজিদ বিন জাহিদ সাদ। ঘটনার বর্ণনায় সাদ জানায়, খুনি দেখতে নায়ক দেবের মতো লম্বা। খোঁচা খোঁচা দাড়ি ছিল। ওই লোকটিই তার মাকে মেরে ফেলে। ওই দৃশ্য দেখে কান্না করলে লোকটি তাকে বাথরুমে নিয়ে আটকে রাখে। সাদ একই বর্ণনা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছেও। অথচ এখনো তারা কোনো ক্লু বা খুনিকে শনাক্ত করতে পারেনি। তারা এখন পর্যন্ত সন্দেহের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

জানা গেছে, জোড়া খুনের মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেছিল পল্লবী থানা পুলিশ। এরপর চাঞ্চল্যকর সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেই মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলে যায় পুলিশের অপরাধ বিভাগের (সিআইডি)র কাছে। পুলিশের এই তিনটি সংস্থার তদন্তের ফল এখন পর্যন্ত শূন্য। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আমরা এখনো অন্ধকারের মধ্যে আছি। হত্যা ঘটনার কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছি না।’

সূত্র জানায়, ঘটনার পর তদন্তে ওই খুনের পেছনে সুইটির স্বামী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জাহিদুল ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) উপসহকারী প্রকৌশলী। তবে তাকে অভিযুক্ত করার মতো প্রয়োজনীয় কোনো তথ্যপ্রমাণও পুলিশ জোগাড় করতে পারেনি। ফলে হত্যার ক্লু বের করতে জাহিদকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জাহিদ ও সুইটির একমাত্র ছেলে ওর মাকে চোখের সামনে খুন হতে দেখে। পুলিশ, ডিবি ও র‍্যাবকে সে তথ্যও দিয়েছে। তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে কাউন্সেলিং করানো হয়েছে। আর এ মামলাটি দীর্ঘদিন তদন্ত করেছেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান। ২০১৫ সালের ১৩ মে দুপুরে পল্লবীর ২০ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ির ছয় তলায় নিজের ফ্ল্যাটে দুর্বৃত্তরা সুইটিকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই বাসায় গ্রাম থেকে বেড়াতে এসে খুন হন জাহিদের মামা আমিনুল ইসলাম (৪৭)। ওই সময় বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল খালেক জানিয়েছিলেন, জাহিদের পূর্বপরিচিত জানিয়ে দুই ব্যক্তি বাসায় যায়। এর আধঘণ্টা পর তারা বেরিয়ে যায়। বিকাল ৩টার দিকে জাহিদ বাসায় গিয়ে স্ত্রী ও মামাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। ঘটনার তদন্ত সম্পর্কে জাহিদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মামলাটি পুলিশ, ডিবি হয়ে গত বছর থেকে সিআইডিতে তদন্তাধীন আছে। এখনো তারা কোনো কিছু বের করতে পারেননি। আর ঘটনার পর থেকে প্রধান সন্দেহভাজন আমি ছিলাম। এজন্য একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। কিছু দিন আগে আমার এবং স্বজনদের সবার মোবাইল ফোনের নম্বর ও বিভিন্ন তথ্য সিআইডি নিয়ে গেছে। এ ছাড়া আমার ব্যবসায়িক অংশীদার আশরাফুল আজম চিশতিও সন্দেহের মাঝে ছিলেন। কারণ ঘটনার আগের দিন তার সঙ্গে ব্যবসা বিচ্ছেদের কথা চলছিল। আর তার সঙ্গে বিচ্ছেদের কথাটি তাকে আমার স্ত্রী সুইটিই গিয়ে বলে আসেন। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও এখন তিনি জামিনে আছেন।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মোফাজ্জল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এখন পর্যন্ত তিনি রহস্যের কিনারা খুঁজে পাননি। রহস্য উদ্ঘাটনের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

 

সর্বশেষ খবর