বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

ঘরোয়া কর্মসূচিতে বন্দী ইসলামী দলগুলো

অনুমতি ছাড়া করা যায় না কর্মসূচি, আছে দ্বন্দ্বও

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ইসলামী দলগুলো ধর্মীয় ইস্যু ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে সরব থাকত। বর্তমানে বিবৃতি-প্রেস বিজ্ঞপ্তি আর বায়তুল মোকাররমে শুক্রবার নামাজের পর বিক্ষোভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে তাদের কার্যক্রম। নানামুখী চাপে অনেকটাই গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে দেশের ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো। কারণ হিসেবে দলগুলো বলছে, কোনো কিছু করতে গেলেই অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি নিতে গেলেই বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুমতি দেওয়া হয় না। পাশাপাশি নানা দিক থেকে হুমকি-ধমকি হয়রানিও শুরু হয়। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-মতবিরোধও তাদের নিষ্ক্রিয়তা-গৃহবন্দিত্বের কারণ। এর মধ্যদিয়েই জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সরব রয়েছে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১২টি ইসলামী দল। এর বাইরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া আছে হেফাজতে ইসলামসহ শত শত ইসলামী সংগঠন। তাদেরও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল জামায়াতে ইসলামী। গৃহবন্দী বলারও কোনো সুযোগ নেই। একে গৃহহীন বলা যায়। কারণ, দলের মগবাজারের কেন্দ্রীয়, পল্টনের ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের কার্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। সভা-সমাবেশ দূরে থাক প্রকাশ্যে চলাফেরাও করতে পারে না নেতা-কর্মীরা। তবে অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে নিয়মিত বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো চলছে। দলটিকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য নানা মহলের চাপ রয়েছে। দলের আমির মকবুল আহমাদ সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার অঘোষিতভাবে জামায়াতের প্রকাশ্য কাজ-কর্ম নিষিদ্ধ করে রেখেছে। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সব অফিস তালাবদ্ধ করে রেখেছে।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠন মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মূর্তি অপসারণের দাবিতে আগামী ২১ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনিটি। পুরানা পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আশপাশে প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে দলটি। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি আলহাজ আবদুর রহমান বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কর্মসূচি পালন করি। জোটের বাইরে থাকা আরেকটি বড় ইসলামী দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। সংগঠনের কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল জানান, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সংগঠিত করা হচ্ছে। জাতীয় রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। তিনি জানান, ইসলামী দলগুলোর এক পতাকাতলে আসা জরুরি, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী ১৫ এপ্রিল রাজধানীর কাজী বশির মিলনায়তনে জঙ্গিবাদ ও মূর্তি অপসারণের দাবিতে সমাবেশ করছে সংগঠনটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে থাকা একমাত্র ইসলামী দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। ১৪ দলে থাকার কারণে সভা-সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি পেতে সংগঠনটির তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না। আর এ সুযোগে সারা দেশে সংগঠনকে চাঙ্গা করা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগে ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসে ইসলামী ঐক্যজোট। সরকারের সঙ্গে অনেকটা সুসম্পর্ক বজায় রেখে সংগঠনটি দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বড়পরিসরে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে সংগঠনটি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে থাকার কারণে খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সভা-সমাবেশের অনুমতি পান না বলে জানান নেতা-কর্মীরা। তারা বলেন, যেখানে বিএনপির মতো দল সভা-সমাবেশের অনুমতি পায় না, সেখানে আমরা কীভাবে পাই! বিএনপির মতো দল প্রশাসনের অনুমতি না পেলে সভা-সমাবেশ করার মতো সামর্থ্য নেই, সেখানে আমরা কীভাবে করি। জোটের বাইরে থাকা আরেকটি বড় ইসলামী দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মুফতি মুলতান মহিউদ্দীন জানান, এককভাবে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই দলকে সংগঠিত করছেন। তিনি জানান, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ হজরত হাফেজ্জী হুজুর ও মুফতি আমীমুল ইহসান এর নাম অন্যায়ভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও সড়ক থেকে নাম অপসারণের প্রতিবাদে আগামী ২২ এপ্রিল জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন করছেন তারা। মূর্তি অপসারণসহ নানান ইস্যুতে সক্রিয় রয়েছেন তারা। এ ছাড়াও জাকের পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএম এল, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর