শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি পণ্যের রাজত্ব চলছে ত্রিপুরায়

বছরে রপ্তানি ৫০০ কোটি টাকার

মুহাম্মদ সেলিম, ত্রিপুরা (ভারত) থেকে ফিরে

প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে চলছে বাংলাদেশি পণ্যের রাজত্ব। ত্রিপুরার বাজারে সিমেন্ট, তৈরি পোশাক, প্লাস্টিকজাতীয় পণ্যের রয়েছে একচেটিয়া দখল। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকেই রপ্তানি হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পণ্য। দেশীয় রপ্তানিকারক ও ত্রিপুরার ব্যবসায়ীদের দাবি, এলসি সহজীকরণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ কিছু সুবিধা বৃদ্ধি করলে ত্রিপুরায় রপ্তানি ছাড়িয়ে যাবে হাজার কোটি টাকা।

ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, ‘বর্তমানে ত্রিপুরায় বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আসে। বাংলাদেশি পণ্যের মান ভালো। এ ছাড়া ভারতের অন্য রাজ্য থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা ভালো হওয়ায় এ বাজার তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি ত্রিপুরার বাজার ধরে রাখতে বাংলাদেশি পণ্যের মান আরও ভালো হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে মানিক সরকার বলেন, ‘বাণিজ্য-সহযোগী বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের কিছুই করার থাকে না। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে ত্রিপুরায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে ত্রিপুরা সরকার।’ ত্রিপুরায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের ডিজিএম আবদুর রহিম বলেন, ‘উন্নত মান, স্বল্পমূল্য আর যোগাযোগ সুবিধার কারণে ত্রিপুরায় বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার তৈরি হয়েছে এ রাজ্যে। কিন্তু কিছু স্বল্পতার কারণে যে গতিতে বাজার বৃদ্ধি হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। এলসি সুবিধা বাড়ানো এবং বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশ করতে পারলে ত্রিপুরায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে।’ ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৪০০ কোটি রুপির (বাংলাদেশি ৪৮০ কোটি টাকা) পণ্য আমদানি করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হয় প্রায় ৪০০ কোটি রুপির পণ্য, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৩৫৭ দশমিক ৬৫ কোটি রুপির, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ২২৯ দশমিক ৮৩ কোটি রুপির, ২০১২-১৩ অর্থবছর ত্রিপুরায় বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হয় ৩৪২ দশমিক ৬৫ কোটি রুপির পণ্য।

ত্রিপুরার চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি এম এল দেবনাথ বলেন, ‘নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ৪০০ কোটি রুপির পণ্য আমদানি করা হয়। এলসি সুবিধা সহজ এবং বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি ত্রিপুরায় প্রবেশসহ আরও কিছু সুবিধা বাড়ানো হলে বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। তখন আমদানি ছাড়িয়ে যাবে হাজার কোটি রুপি।’

ত্রিপুরার আমদানিকারক এবং বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ত্রিপুরা রাজ্যে একচেটিয়া বাজার ধরে রেখেছে বাংলাদেশের সিমেন্ট, প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী, নানা জাতের মাছ ও তৈরি পোশাক। এ ছাড়া প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে আসছে ভাঙা পাথর, পিভিসি পাইপ, প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয়, ধাতব, কাঠ, শুকনা মাছ, সিনথেটিক নিটেড ফ্যাব্রিকস, সিরামিক টাইলস, অ্যালুমিনিয়াম, ব্যাটারি, ইট ভাঙার মেশিন, তাঁতের শাড়ি, মেলামাইন সামগ্রীসহ নানা পণ্য। দেশের রপ্তানিকারকরা জানান, ছয়টি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি হয় ত্রিপুরায়। এসব বন্দরের মধ্যে রয়েছে আগরতলার পার্শ্ববর্তী আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি), সিপাহীজলা জেলার শ্রীমন্তপুর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স, খোয়াই জেলার খোয়াইঘাট ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন, উত্তর জেলার ওল্ড রাঘনা বাজার ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন, ঊনকোটি জেলার মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন ও দক্ষিণ জেলার মুহুরীঘাট ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন।

সর্বশেষ খবর