শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেড় যুগেও শেষ হয়নি বিচার

রমনা বটমূলে বোমা

আহমেদ আল আমীন ও তুহিন হাওলাদার

দেড় যুগেও শেষ হয়নি বিচার

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার বিচার কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। ঘটনার পর এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে দেড়যুগ। ওই ঘটনার দুটি মামলার মধ্যে একটি হাই কোর্টে এলেও অন্যটি এখনো বিচারিক আদালতের এজলাসই পেরুতে পারেনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এ দুই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও সময় লাগবে। তবে ইতিমধ্যে রমনার এই বোমা হামলা মামলার অন্যতম আসামি মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে অন্য একটি মামলায়। এই প্রেক্ষাপটে রমনার ঘটনায় নিহতদের স্বজনের বিচার দাবি প্রকৃত অর্থে কবে পূরণ হবে তা নিয়েই এখন প্রশ্ন। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, রমনা বটমূলে হামলা মামলার মুখ্য আসামির ফাঁসি ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। এ মামলাটি এতদিন ধরে বিলম্বিত হওয়ায় বিচারে কি হবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান। ফৌজদারি মামলার একটি বিশেষ দিক হলো দ্রুত তদন্ত ও বিচার। এই মামলার ক্ষেত্রে তা হয়নি। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচারের রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আদালত। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রমনা বটমূলে হামলার ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি একসঙ্গে হচ্ছে। ১৪ মে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। আমরা আসামিদের দণ্ড বহালের পক্ষে হাই কোর্টে আবেদন জানাব। আগামী  মাসের মধ্যেই বিচার শেষ হতে পারে। গত ৮ জানুয়ারি রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলায় আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেছে। ২০০১ সালের পয়লা বৈশাখে ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আহত হন অনেকে। বোমা হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনায় ওই দিনই নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন। হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়। হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন—মুফতি হান্নান (অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে), আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের। জানা গেছে, পেপারবুকের তথ্য অনুসারে ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামি এখনো পলাতক। তারা হলেন তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, আবু বকর, শফিকুর ও আবদুল হাই। আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে সাতজনের করা ছয়টি আপিলের শুনানি হচ্ছে। এর মধ্যে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন, সুমন, শাহদাত উল্লাহ ও আবু তাহের পৃথক আপিল করেছেন। তবে শেখ ফরিদ ও মো. ইয়াহিয়া দুজনে একটি আপিল করেছেন। সঙ্গে রয়েছে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন ও সুমনের জেল আপিল। বিচারিক আদালতে হত্যা মামলায় রায় হলেও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে হওয়া মামলাটি এখনো বিচারাধীন। জানা গেছে, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বছরের পর বছর মামলাটি ঝুলে আছে। রমনার ঘটনায় হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার পর সাক্ষীরা আদালতে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় বিষয়টি নজরে আনা হলে গতকাল ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও ডাক্তারসহ এ মামলার ৬০ সাক্ষীকে গ্রেফতাদের নির্দেশ দেন। জানা গেছে, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলের সেই ঘটনায় হত্যা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে রমনা থানা পুলিশ। পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হয়ে মামলাটি ২০০৩ সালে সিআইডিতে যায়। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০০৮ সালে হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় আদালতে। হত্যা মামলা নিম্ন আদালতে নিষ্পন্ন হলেও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ রয়ে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর