শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণার ফাঁদ

দেড় লাখ লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি

আকতারুজ্জামান

তিন পদে দেড় লক্ষাধিক লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণায় নেমেছে একটি চক্র। প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে ৩০০ ও ২০০ টাকার পোস্টাল অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। মন্দিরভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলে ‘হিন্দু কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের’ নামে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

গত ৪ এপ্রিল দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হয়। ২৭ এপ্রিল আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়।

গতকাল পর্যন্ত চার-পাঁচটি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ‘হিন্দু কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলে পরিচয় দেওয়া তপন কুমার মণ্ডল। সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় দুজন পরিদর্শক, প্রতি ইউনিয়নে ৮ জন শিক্ষক ও প্রতি ওয়ার্ডে দুজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরিদর্শক পদের জন্য ৩০০ টাকার ও শিক্ষক পদের জন্য ২০০ টাকার পোস্টাল অর্ডার দেওয়ার কথা বলা আছে বিজ্ঞপ্তিতে। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে এই অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে— ৫ম তলা, রোড নম্বর ৭/ডি, বাড়ি নম্বর ২২, সেক্টর ৯, উত্তরা। সরেজমিন এই অফিসে গিয়ে দেখা যায়, দেড় লাখ লোক নিয়োগ দেওয়ার প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় মাত্র  এক কক্ষের। কক্ষটি মধ্যভাগে পার্টিশন দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী মাত্র তিনজন। অফিসে গিয়ে দুই নারী কর্মচারীর দেখা মেলে। কথা বলে জানা যায়, এ নিয়োগ সংক্রান্ত বৈধ কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেই। এমনকি এ ধরনের মন্দিরভিত্তিক একটি শিক্ষা উদ্যোগের ব্যাপারে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কিছুই জানে না। এ ধরনের প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ প্রতিবেদক এক নারী কর্মচারীর কাছে অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ফোনে তপন কুমার মণ্ডল নামে এক তরুণকে ডেকে আনেন। তপন নিজেকে অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলে পরিচয় দেন। তপন জানান, এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা দিতেই এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন তারা। প্রতিষ্ঠানের কোনো নিবন্ধন, ধর্মীয় শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো অনুমোদন বা নিবন্ধন নেওয়া হয়নি। ‘জিইডি ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিওর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিন্দু কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের মাদার অর্গানাইজেশন জিইডি। জিইডির নিবন্ধন রয়েছে। একটি সংগঠনের নামে অন্য কোনো অ্যাসোসিয়েশন কার্যক্রম চালাতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সারা দেশে প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষক, পরিদর্শক নিয়োগের বৈধতা, কার্যক্রম ও বেতন কীভাবে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তপন বলেন, আমরা বিদেশের অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা করছি। অফিসের জনবল নিয়োগ করে সারা দেশে ধাপে ধাপে শিক্ষক, পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়ার কথা জানান তিনি। অ্যাসোসিয়েশন পরিচালনার জন্য সাত সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ থাকার কথা জানালেও এ পরিষদের কারও নাম বলতে পারেননি কথিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার মণ্ডল।

একপর্যায়ে তপন নিজেকে ‘জননেত্রী সৈনিক লীগে’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, এ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বিভিন্ন সচিব, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী জড়িত রয়েছেন। তবে তাদের নাম জানতে চাইলে তপন কিছুই জানাতে পারেননি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এই অ্যাসোসিয়েশন সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। মনে হচ্ছে, এর পেছনে প্রতারক চক্র জড়িত। এদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা  উচিত। তিনি বলেন, এমন সংগঠনের নাম ব্যবহার করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পেলে তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। এই প্রতারক চক্র থেকে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ এদের খপ্পরে পড়ে বিভ্রান্ত না হন। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কেউ শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন না। অনেক প্রতারক চক্র এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ চক্রকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর