শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

গ্রামবাসীর আপত্তি তিন জঙ্গির দাফন

প্রতিদিন ডেস্ক

ফাঁসির পর তিন জঙ্গিকে গতকাল দাফন করা হয়েছে। তবে তাদের দাফনে গ্রামবাসী তীব্র আপত্তি জানান। তারা বিক্ষোভ-সমাবেশও করেন।

অন্যদিকে প্রশাসনের উদ্যোগে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তাদের দাফন করা হয়। শীর্ষ জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নানকে তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের হিরণ গ্রামে, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে চাঁদপুর সদরের বকশী পাটোয়ারী বাড়িতে এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনকে মৌলভীবাজারের কোনাগাঁও গ্রামে দাফন করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— গোপালগঞ্জ : কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নানের দাফন তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল ভোর ৫টা ২০ মিনিটে হান্নানের লাশ কাশিমপুর কারাগার থেকে হিরণ গ্রামে নিয়ে আসা হয়। লাশ পৌঁছানোর পর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রথমে একটি ভ্যানে করে তার বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে প্রশাসনের কাছ থেকে হান্নানের লাশ তার বড় ভাই মাওলানা আলীউজ্জামান মুন্সী স্বাক্ষর করে বুঝে নেন। এরপর তার মা রাবিয়া বেগম ও স্বজনরা লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সেখান থেকে লাশ জানাজার জন্য হিরণ বালিকা মাদ্রাসা ও এতিমখানা মাঠে নেওয়া হয়। মুফতি হান্নানের জানাজার নামাজ পড়ান তার বড় ভাই মাওলানা আলীউজ্জামান। জানাজায় সব মিলে ৩১ জন উপস্থিত ছিলেন। আত্মীয়-স্বজন ছাড়া গ্রামের অন্য কেউ তার জানাজার নামাজে উপস্থিত হননি। শেষে ৫টা ৪৫ মিনিটে লাশ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে মুফতি হান্নানের লাশ দাফন নিয়ে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগেই মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ গ্রামবাসী তার লাশ কোটালীপাড়ায় দাফনের ব্যাপারে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে তারা রাতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। এ ছাড়া রাতে মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় কার্যকরের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে জেলা সদর ও কোটালীপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ-উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। চাঁদপুর : ব্যাপক পুলিশি প্রহরায় চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের বকশী পাটোয়ারী বাড়িতে জঙ্গি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টায় বকশী পাটোয়ারী বাড়ি প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পড়ান মধ্য তরপুরচণ্ডী আলী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাওলানা হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক, বিপুলের চাচা বাচ্চু পাটোয়ারী, কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিয়ন সেক্রেটারি জাকির হোসেন বেপারীসহ বাড়ির লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অন্য কেউ জানাজায় অংশ নেননি। দাফনের পর থেকে ওই এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।

মৌলভীবাজার : জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) মুফতি হান্নানের সহযোগী দেলোয়ার হোসেন রিপনের দাফন মধ্যরাতের পর হয়েছে। কড়া নিরাপত্তায় রাত ১টা ৪০ মিনিটে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারের কোনাগাঁও গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে রিপনের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে রাত ১২টা ১৫ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সে করে পুলিশ প্রহরায় রিপনের মরদেহ কোনাগাঁও গ্রামে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাত ১টা ২৫ মিনিটে কোনাগাঁও ঈদগাহে তার জানাজার নামাজ শেষে ১টা ৪০ মিনিটে দাফন করা হয়। রিপনের জানাজার নামাজে ইমামতি করেন কোনাগাঁও জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. ইব্রাহিম আলী। রাতে রিপনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলেও পরিবারের সদস্য ও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ স্বজন ছাড়া সংবাদকর্মীসহ কাউকে কাছাকাছি যেতে দেয়নি পুলিশ। ওই এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রশাসনের ব্যাপক নজরদারিতে গ্রামের বাসিন্দারাও ভয়ে ঘর থেকে বের হননি। অবশ্য দাফনের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর