রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মর্যাদাহীন হয়ে পড়ছে এফবিসিসিআই

জুতা, সুতা, সোনা, ডিম, চাল অ্যাসিড, সাইকেল সমিতির নেতারাও পরিচালক প্রার্থী

রুহুল আমিন রাসেল

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে মানমর্যাদা হারিয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে তাদেরই শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটির অবস্থা এখন এমন করুণ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, খ্যাতনামা ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। জুতা, সুতা, সোনা, ডিম, চাল, বিস্কুট, বর্জ্য কাগজ, হোমিও প্যাথিক, অ্যাসিড, সাইকেল, ক্যাব, গাড়ির পার্টস সমিতির নেতারাও এফবিবিসিআইর পরিচালক প্রার্থী হয়েছেন। তারা নীতিনির্ধারণী ফোরামে কী ভূমিকা রাখবেন, এই প্রশ্ন এখন ব্যবসায়ী মহলে। জানা গেছে, এফবিসিসিআই নির্বাচনে এবার সভাপতি পদে এখন একমাত্র প্রার্থী বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বায়নের যুগে পরিচালকরা যাতে সভাপতি ও সহসভাপতিদের অনুপস্থিতিতে প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সম্মুন্নত

রাখার জন্য কাজ করতে পারেন, যাদের মেধা আছে, তেমন পরিচালক নির্বাচিত হওয়া উচিত। কেউ পরিচালক হলেন, কিন্তু তিনি কাজটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন না, তা ব্যবসায়ী সমাজের ওপর অন্যায় করা হবে। এফবিসিসিআইকে যোগ্যতা ও মেধাভিত্তিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১৮ জন করে মোট ৩৬ পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৭৭ জন। চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১২টি করে মোট ২৪টি পদের মনোনীত পরিচালক কোটায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আরও ২৪ জন। এরা বিনা ভোটেই পরিচালক হবেন। সব মিলিয়ে সর্বমোট ১০১ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন ৭৭ জন ব্যবসায়ী। নির্বাচন বোর্ডের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী- গত ১০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত চেম্বার গ্রুপের ৩৫ জন, অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ৪২ জন পরিচালক পদে প্রার্থী হয়েছেন। এরা হলেন— জুতা ব্যবসায়ী হাজী মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন, সুতা সেলাই সমিতির নেতা আবদুল হক, সোনা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন, ডিম ব্যবসায়ী তাহের আহমেদ সিদ্দিকী, চাল রপ্তানিকারক সমিতির নেতা ইশাকুল হোসাইন সুইট, ব্রেড বিস্কুট ও কনফেকশনারির সমিতির জালাল উদ্দিন, বর্জ্য কাগজ সরবরাহকারী সমিতির আমির উদ্দিন বিপু, হোমিও প্যাথিক মেডিসিন সমিতির ডা. মাহবুব হাফিজ, অ্যাসিড মার্চেন্ট সমিতির পলাশ উল্লাহ, সাইকেল আমদানি সমিতির মিজানুর রহমান বাবুল, ক্যাব সমিতির হাফেজ হারুন, অটো পার্টস সমিতির নেতা আবুল আয়েস খান, রেলওয়ে পার্টস সরবরাহকারী সমিতির ফেরদৌস হুদা চৌধুরী, স্পেশালাইজড হার্ডোকার্বন সমিতির এনায়েত হোসেন চৌধুরী, এসএমই ওনার্স সমিতির আলী জামান, এগ্রিকালচার মেশিনারি সমিতির খোন্দকার মনিরুর রহমান জুয়েল, পিকচার এক্সিবিউটরস সমিতির কাজী শোয়েব রশিদের মতো ব্যবসায়ীরা। এরা এবার এফবিসিসিআইর পরিচালক পদে প্রার্থী হয়েছেন। তবে এই নির্বাচনে নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারাও অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন নারী উদ্যোক্তা হলেন—অভিনেত্রী শমী কায়সার ও উদ্যোক্তা হেলেনা জাহাঙ্গীর। তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এফবিসিসিআইর বর্তমান পরিচালকদের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ও বারভিডা’র সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন, সেকেন্ডারি কোয়ালিটি টিনপ্লেট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড মার্চেন্টস সমিতির নিজাম উদ্দিন রাজেশ, খোন্দকার গ্রুপের চেয়ারম্যান খোন্দকার রুহুল আমিন, কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের মুনতাকিম আশরাফ, আবু মোতালেব, শাফকাত হায়দার, আমিন হেলালী, আবু নাসের এবং এস এম জাহাঙ্গীর হোসাইন। নির্বাচনে আরও অংশ নিয়েছেন এফবিসিসিআইর উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ, সেঞ্চুরি গ্রুপের চেয়ারম্যান এম জি আর নাসির মজুমদার, মুদ্রণ শিল্প সমিতির জহিরুল ইসলাম, আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশনের ড. কাজী এরতেজা হাসান, হার্ডবোর্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, অ্যালমুনিয়াম ম্যানুফেকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের ওবায়দুর রহমান, লেদার গুডস ম্যানুফেকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের আমজাদ হোসাইন, প্রাইভেট রেডিও ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাশিদুল হাসান চৌধুরী রনি, ইনডেনটিং অ্যাসোসিয়েশনের জামাল উদ্দিন, ঋণ গ্রহীতা সড়ক পরিবহন সমিতির গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন, কনস্ট্রাকশন শিল্প মালিক সমিতির জামাল উদ্দিন ও অটো বিস্কুট সমিতির শফিকুর রহমান ভূঁইয়া। এফবিসিসিআইর এবারের নির্বাচনে চেম্বার গ্রুপ থেকে অংশ নেওয়া আলোচিত প্রার্থীরা হলেন— সংগঠনটির সাবেক (প্রথম) সহসভাপতি টাঙ্গাইল চেম্বারের আবুল কাশেম খান, মানিকগঞ্জ চেম্বারের দুই প্রার্থী মোনায়েম খান, এফবিসিসিআইর বর্তমান পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু, বজলুর রহমান। জানা গেছে, সারা দেশের চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে মনোনীত হয়ে এফবিসিসিআইর সাধারণ পরিষদের সদস্য হওয়া (জেনারেল বডি মেম্বার বা জিবি সদস্য) ২ হাজার ৩৪১ জন ব্যবসায়ী পরিচালক পদের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এবার চেম্বার গ্রুপের ৪৫৪ জন ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১ হাজার ৮৮৭ জন ভোটার আছেন। তাদের ভোটে নির্বাচিত পরিচালকরা সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত পদে ভোট দিতে পারবেন, যদি এই পদগুলোতে একাধিক প্রার্থী থাকেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ থাকায় গত কয়েকটি নির্বাচনে সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি ও সহসভাপতি পদে নির্বাচন হয়নি। এবারও তেমনটা হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী মহল।

সর্বশেষ খবর