আজ দলীয় ভিত্তিতে ১৫৫ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণ। ভোটকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট ইউপিতে বইছে উৎসবের আমেজ। তৃণমূলের এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে চূড়ান্ত লড়াই হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচনী এলাকায় আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গতকাল সব ভোটকেন্দ্রে ব্যালটসহ নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে টহলে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্র। ইসি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মাঠের নির্বাচনী কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজনকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের। কমিশনাররা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এ জন্য সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কমিশন প্রস্তুত রয়েছে। তবে আজ নতুন ইসির তৃণমূলে নিরপেক্ষতা প্রমাণের পরীক্ষা বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবার প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য প্রার্থীরা। ওই দিন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে অনেক প্রার্থী ব্যাপক ভূরিভোজের আয়োজনও করেছিলেন। ভোটারদের কাছে পাঠিয়েছেন নানা উপহারসামগ্রী। শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সব ধরনের সভা-সমাবেশ মিছিল মিটিংয়ের ওপর। তৃণমূলের এ নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে। দুই দলের প্রতীক নৌকা-ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধে রয়েছেন। ভোটের দুই দিন আগে শুক্রবার থেকে মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পরের দিনও টহলে থাকবেন তারা। এদিকে গতকাল ভোটের আগের রাতেও শেষ মুহূর্তে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। বিত্তশালী প্রার্থীরা ভোট কিনতে গভীর রাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গেছেন। নগদ অর্থ ছাড়াও  ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শাড়ি, লুঙ্গি, টি-শার্ট, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী। অন্যদিকে তৃণমূলে ভোট নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেক প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকি-ধমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের ১৭৬টি মোবাইল টিম, ৯০ প্লাটুন বিজিবি, ৯০ প্লাটুন র‌্যাব এবং উপকূলীয় এলাকার ইউপিতে ৮ প্লাটুন কোস্ট গার্ড রাখা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, প্রত্যেক ইউপিতে পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের ২টি মোবাইল টিম, বিজিবি ১ প্লাটুন, র‌্যাব ১ প্লাটুন এবং উপকূলীয় এলাকার ইউপিতে কোস্ট গার্ড ১ প্লাটুন রাখা হয়েছে।  ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে (ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে) এবং মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত (ভোটের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা) সব ধরনের জনসভা, মিছিল, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, দলীয় প্রতীকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার পর এবারে তৃণমূলে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় ভোট করতে নতুন ইসি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, আজ সাধারণ নির্বাচন হবে ৫৫টি ইউপিতে, উপ-নির্বাচন হবে ১০২টি ইউপিতে এবং বন্ধ ঘোষিত, মামলাজনিত বা অন্য কারণে স্থগিত ইউপি, ভোটকেন্দ্রে পুনঃভোট গ্রহণ হবে ১৭টি ইউপিতে। সব মিলে আজ ১৫৫ ইউপিতে ভোট গ্রহণ হবে। উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব নেন। এরপর কুমিল্লায় প্রথম বড় নির্বাচন করল তারা। এ ছাড়া দুটি উপনির্বাচন, একটি সিটি করপোরেন ও স্থানীয় সরকারের ১৮টি নির্বাচন হয়েছে নতুন ইসির অধীনে।