সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

জলোৎসব পাহাড়ে

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

জলোৎসব পাহাড়ে

জলোৎসবে মাতোয়ারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। পাহাড়ে বৈসাবি ও বর্ষবরণ উৎসব শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইং উৎসব। মারমা ভাষায় এ উৎসবকে বলা হয় ‘রিলংপোয়ে’। পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে এ উৎসবের আয়োজন করে মারমা ও রাখাইন সম্প্রদায়। জলখেলার জন্য এরা আগে থেকে প্যান্ডেল তৈরি করে।  ওই প্যান্ডেলে মারমা যুবক-যুবতীরা একে অপরকে জল ছিটিয়ে কাবু করার প্রতিযোগিতায় শামিল হয়। এ সময় কৃত্রিম ভারি বর্ষণ হয় অনুষ্ঠানস্থলজুড়ে। উৎসবের আনন্দ জলে সিক্ত হয় মারমা তরুণ-তরুণীরা। আনন্দ-উল্লাসে নেচে-গেয়ে পার করে দিন।

গতকাল বেলা ১১টায় জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) উদ্যোগে আয়োজিত সর্বজনীন জলোৎসবের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। এ সময় সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মো, গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান, রাঙামাটি জোন কমান্ডার রেদোয়ান, মারমা সংস্কৃতি সংস্থার আহ্বায়ক অংসু ছাইন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ ও মো. আবুল কালাম, জেলা পরিষদ সদস্য মুছা মাতব্বর উপস্থিত ছিলেন। মারমা সম্প্রদায় ছাড়াও উৎসবে যোগ দেয় চাকমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, গুর্খা, অহমিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, উসুই, লুসাই, চাক, রাখাইন, খুমি, বমসহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার নারী-পুরুষ। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ সমবেত হয় উৎসবে। পার্বত্য তিন জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পদচারণায় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় পুরো কাউখালী উপজেলা। সকাল থেকে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ চট্টগ্রাম থেকেও মানুষের ঢল নামতে শুরু করে জলোৎসবস্থলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসমুদ্রে পরিণত হয় চন্দ্রঘোনা চিত্মরম এলাকা। পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলনমেলায় জমে উঠে সাংগ্রাইং উৎসব।

 প্রসঙ্গত, পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো বৈসাবিকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে। যেমন-চাকমারা-বিজু, ত্রিপুরা-বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা-বিষু, অহমিয়ারা-বিহু, মারমারা-সাংগ্রাইং নামে পালন করে থাকে। মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে জল ছিটিয়ে পুরনো বছরের সব গ্লানি, দুঃখ, বেদনা ও অপশক্তিকে ধুয়েমুছে দূর করে নতুন জীবনযাত্রা শুরু করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর