সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় ভোট সংঘর্ষে নিহত এক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্য দিয়ে গতকাল সারা দেশে ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সংঘর্ষে একজন নিহত, ১৪ জন আহত হয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন, উপনির্বাচন ও বন্ধ ঘোষিত কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচন সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল দেশের প্রায় ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণ হয়। তবে দখল-কারচুপির অভিযোগে সিরাজগঞ্জে বিএনপি, কুমিল্লায় স্বতন্ত্র এবং চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দুটি ইউপির সাধারণ নির্বাচনে সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পৃথক চারটি মরিচাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দরিয়াদৌলত পূর্ব নতুন সরকারি প্রাথমিক ও মরিচাকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে টেঁটাবিদ্ধসহ পাঁচজনকে নরসিংদী ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আইয়ুবপুর ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ) ও দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের শরিফুল ইসলাম রিপন (আওয়ামী লীগ)। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডে মরিচাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থী জালাল উদ্দিন জালাল ও মুন্সি মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সকাল ৯টার দিকে কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে চারজন আহত ও ফারুক মিয়া নামে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আট নম্বর ওয়ার্ডে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ইছমাইল হোসেন ও শফিকুল ইসলাম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন, তিন নম্বর ওয়ার্ডে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নতুন কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মো. তপন ও মাইন উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সাতজন আহত হয়েছে। এ সময় সংরক্ষিত এ ওয়ার্ডের নারী প্রার্থী আক্তারুনেছার বাড়ি ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছে। বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অংশু কুমার দেব জানান, প্রত্যেকটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সৌমেন বিশ্বাস ছন্দ বলেন, দু-তিনটি কেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এতে কেন্দ্রের ভোট গ্রহণে কোনো সমস্যা হয়নি। এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে। সারা দেশে প্রায় ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ এবং উপনির্বাচন ছিল। কোনো কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ বা স্থগিত হয়নি এবং সব অ্যাঙ্গেল থেকে আমরা যে তথ্যগুলো পেয়েছি তাতে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। এ ছাড়া আগামী সব নির্বাচনের চাবি নির্বাচন কমিশনের হাতেই থাকবে, চাবি অন্য কারও কাছে যাবে না। গত বছর দলীয় ভিত্তিতে মার্চ-জুনে ছয় ধাপে তিন সহস্রাধিক ইউপিতে ভোট হয়। এরপর অক্টোবর-নভেম্বরে বিলুপ্ত ছিটমহলসহ আরও কিছু ইউপির ভোট হয়েছে। জানা গেছে, ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে কুমিল্লার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। দুপুরে তিতাস উপজেলার জিয়াকান্দির নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে  গোলাম সারোয়ার এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, এ নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন। কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপির কারণে আমি এ নির্বাচন বর্জন করলাম। এ ছাড়া ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ তুলে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী নাজমুল হুদা। দুপুরে ঘুড়কা বাজারে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিল্লুর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীর কেন্দ্র দখল ও দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আমিরুল ইসলাম পাটওয়ারী খোকা নির্বাচন বর্জন করেছেন। এ ছাড়া এই ইউপিতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে পুলিশ ফাঁকা গুলি করেছে। মতলব দক্ষিণ থানার ওসি কুতুবউদ্দিন বলেন, দুপুরে খাদেরগাঁও ইউনিয়নের ঘিলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে।

নির্বাচনের চাবি ইসির হাতেই থাকবে : সচিব

আগামী সব নির্বাচনের চাবি নির্বাচন কমিশনের হাতেই থাকবে, চাবি অন্য কারও কাছে যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। ইসি সচিব বলেন, আশা করা যায়, নির্বাচন কমিশন যেভাবে এগোচ্ছে এবং তাদের যে প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তাতে নির্বাচনের চাবি সবসময় নির্বাচন কমিশনের কাছেই থাকবে। চাবি কারও কাছে যাবে না।

সচিব বলেন, মেসেজ একটাই সুষ্ঠু, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। নতুন কমিশন দায়িত্ব  নেওয়ার পর চিত্র কিছুটা পাল্টেছে কিনা জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, চিত্র কিছুটা পাল্টেছে এটা আমি বলতে পারি। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়েছে। আমি মনে করি, সামনের দিনগুলোতেও ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর