সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রাণ পাচ্ছে না সাভারের চামড়া শিল্পনগরী

মোস্তফা কাজল ও নাজমুল হুদা, সাভার থেকে ফিরে

প্রাণ নেই রাজধানীর উপকণ্ঠের সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে। ট্যানারি মালিকরা কারখানা চালুর তোড়জোড় শুরু করলেও নেই শ্রমিকদের কোলাহল। সব কারখানায় উৎপাদন শুরু না হওয়ায় কর্মহীন রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। সরকারের প্রস্তুতি এবং মালিকদের সদিচ্ছার অভাবেই সাভার চামড়া শিল্প নগরীকে উৎপাদনের এখনো উপযোগী করা যায়নি। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রথম সারির প্লটগুলোর সামনের সড়কের কাজ শেষ হলেও পেছনের দিকের সড়ক এখনো কাঁচা। বৃষ্টিতে সেখানে হাঁটু পর্যন্ত কাদা জমে যায় বলে জানিয়েছেন প্লটগুলোর মালিকেরা। তাছাড়া গ্যাস সংযোগ না থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ নেওয়ায় মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। কোনো কোনো কারখানায় মালিকেরা নির্মাণাধীন ভবনেই মেশিনপত্র বসাচ্ছেন। রপ্তানি আদেশ ধরে রাখতে কেউ কেউ সেখানে অল্প কাজ শুরু করেছেন। তবে এখনো কিছু কিছু প্লট খালি পড়ে আছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদফতর গত ৮ এপ্রিল হাজারীবাগের সব কারখানার সেবা সার্ভিসের সব লাইন কেটে দেয়। হাজারীবাগে কারখানা ছিল এমন ১৫৪টি ট্যানারি সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দ পেয়েছে। ২০১৩ সালে সরকার এই শিল্প নগরীর নকশা অনুমোদন করে কারখানা স্থাপনের জন্য মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দেয়। দেখা গেছে, বেশিরভাগ কারখানারই অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। তবে কারও কারও একতলা থেকে ছয়তলা ভবন প্রস্তুত হয়েছে। এসব নির্মাণাধীন ভবনে ৪৪টি কারখানা কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। ট্যানারি মালিকরা দাবি করেছেন, অর্থ সংকটের কারণে কারখানা নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। ট্যানারিগুলো শিল্পনগরীর জমি নিজেদের নামে নিবন্ধন না পাওয়ায় ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ কারখানা স্থাপন করতে না পারলেও ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদনে দ্রুত গ্যাস সংযোগ চান। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ ট্যানারি গ্যাস পেতে তিতাসের কাছে আবেদন করেছেন। তিতাসও গ্যাস সংযোগ প্রদান শুরু করেছেন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ আদালতের রায় মেনেই আমরা কাজ করছি। নইলে কারখানা চালু করা যাবে না। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আরও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে পুরোপুরি ট্যানারি চালু করতে। এখন সাভারের সব ট্যানারিতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া দরকার। যাতে ট্যানারি মালিকরা দ্রুত উৎপাদনে যেতে পারে। সাভারের ১২০টি ট্যানারি গ্যাস সংযোগ পেতে আবেদন করেছে। কিন্তু হাজারীবাগের ৬১ ট্যানারিতে গ্যাস সংযোগ ছিল। কর্তৃপক্ষ কেবল ওই ৬১টি ট্যানারিতে গ্যাস দেওয়ার কথা বলছে। চামড়া শিল্প নগরী ঘুরে আরও দেখা যায়, নবারুণ ট্যানারির তিনতলা পর্যন্ত শুধু ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ট্যানারির প্রত্যেক তলার নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় নিচতলায় চলছে ওয়েট ব্লু’র কাজ। দ্বিতীয় তলার এক পাশে যন্ত্রপাতির বসানোর কাজ চলছে। এ ফ্লোরের অপর পাশে চলছে চামড়া রং করার কাজ। অন্য পাশে কয়েকটি যন্ত্রে চলছে জুতা তৈরির কাজ। তার পাশে রয়েছে স্তূপ করা জুতা। তৃতীয় তলায় পড়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী। ক্রেতাদের অর্ডার থাকায় দ্রুত সরবরাহ করতে এভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান শ্রমিকরা। এখানেই ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া তৈরির যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। খানিকটা দূরে ভেলেক্স, কিট ও সুপিরিয়র লেদারের তিন কারখানায় একসঙ্গে চলছে যন্ত্রপাতি স্থাপন। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর তত্ত্বাবধায়ক মো. মাইনুদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাভারের কারখানার ওয়েট ব্লুর ড্রাম স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনেক কারখানায় ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারের যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি দ্রুত স্থাপন করে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে বলে অনেকে জানান। মারসন্স ট্যানারির পরিচালক মাকসুদুর রহমান বলেন, তার কারখানায়ও ওয়েট ব্লু’র কাজ শুরু হয়েছে। এখন ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদন করা হবে। এ জন্য ইতালি থেকে হাইড্রলিক প্রেসসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গ্যাসের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এখনো গ্যাস সংযোগ মেলেনি। গ্যাস না পাওয়া পর্যন্ত ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। হেমায়েতপুরের ট্যানারির নতুন কারখানার মধ্যে রিলায়েন্স, আজমীর, এপেক্স, বে, মইন, মদিনা, সামিনাসহ বিভিন্ন ট্যানারিতে ওয়েট ব্লুর পাশাপাশি ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদনের জন্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রক্রিয়া বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। এরকম শিল্পনগরীতে শাহজালাল ও মাইজদী ট্যানারির মতো অনেক কারখানার ভবন নির্মাণকাজ এখনো মাঝামাঝি পর্যায়ে। কর্মরত শ্রমিকরা জানান, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) অর্ধেক অংশ চালু হয়েছে। বাকি অর্ধেক এক মাসের মধ্যে চালু হবে। এ কারণে পানিতে কিছুটা দুর্গন্ধ হচ্ছে। সিইটিপির সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে আরও এক মাস সময় লাগবে। ৯০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি প্রক্রিয়া পরিশোধন করা সম্ভব হবে। সিইটিপির পাশেই সলিড ওয়েস্টের ডাম্পিং স্টেশন। সেখানে খোলা স্থানে কঠিন বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। চারদিকে বেশ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

সর্বশেষ খবর