মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

একমঞ্চে মহিউদ্দিন-নাছির

অভিমান ঘোচাতে কাদের যাবেন চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম


একমঞ্চে মহিউদ্দিন-নাছির

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে চলে আসা কোন্দল নিরসনে উদ্যোগী হয়েছেন দলের হাইকমান্ড। কেন্দ্রের নির্দেশে গতকাল একমঞ্চে উঠলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এতে দেখা যায় দুই নেতার ঐক্যের সুর। এদিকে এই দুই নেতাকে শিগগিরই গণভবনে ডাকছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে দুই নেতার অভিমান ঘোচাতে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম যাচ্ছেন। ওইদিন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় আ জ ম নাছিরসহ নগর নেতাদের নিয়ে নাস্তা খাবেন তিনি। দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর দুই নেতার পুরনো দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে আসায় উভয় গ্রুপে যেন অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ ওই নেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বর্ধিত হারে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়, পাথরঘাটা ফিশারিঘাট থেকে মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র সরানো, আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ নিয়ে মেয়রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। সাত দিন আগে নগরীর লালদীঘি মাঠে জনসভা করে নাছিরের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন মহিউদ্দিন। পাল্টা জনসভা করেন আ জ ম নাছির। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ করতে হবে। ১২ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় আসে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তাদের গণভবনে ডাকবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানান। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম মহানগরের দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। গতকালও দুই নেতা একমঞ্চে উঠে মুজিবনগর দিবস পালন করায় ফোন করে ধন্যবাদ জানান শামীম। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুধু চট্টগ্রামই নয়, যেখানে দলের অভ্যন্তরে সমস্যা সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে মিটিয়ে ফেলতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা উদ্যোগও শুরু করেছেন। যেখানেই সমস্যা, সেখানেই যাব। উভয় নেতাদের এক টেবিলে বসিয়ে যাদের সমস্যা তাদের নিজেদেরই সমাধানের পথ তৈরি করতে বলব। নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের কোন্দল কাম্য নয়। এখন কোন্দলের সময় নেই। ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেলা হবে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে ২২ এপ্রিল দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেখানে যাবেন। ওইদিন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় বর্তমান মেয়র নাছিরসহ নগর নেতাদের নিয়ে নাস্তা খাবেন। এ ছাড়া ২৯ এপ্রিল মহানগর ও ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে।’ জল্পনা-কল্পনার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা একই মঞ্চে উঠলেন, খোশ মেজাজে কথাও বললেন। বেশ কয়েক দিন ধরে তারা পরস্পরকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেওয়ায় তোলপাড় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সবাইকে তাক লাগিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন একই মঞ্চে। দৃশ্যটি দেখে নেতা-কর্মীরা অভিনন্দন জানান। এক সপ্তাহ আগেও লালদীঘির মাঠে নিজ দলের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘বক্তব্য’ দিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ তৈরি করলেও প্রকাশ্য সভায় সেটা আবার নিজেই নিরসন করেছেন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নগর আওয়ামী লীগের মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় মেয়র নাছিরকে নিজের পাশে ডেকে নেন মহিউদ্দিন। এ সময় নাছির হাসিমুখে সমাবেশমঞ্চ থেকে এসে সালাম দিয়ে মহিউদ্দিনের পাশে দাঁড়ান। মহিউদ্দিন নাছিরের হাত ওপরে তুলে ধরে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। সভাস্থল এ সময় হাততালি আর স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। এ সময় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বক্তৃতা দেওয়ার সময় আমি অনেক কিছু বলেছি। কেন বলেছি তা আজ না-ই বা বললাম। আগামীতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে চলব। আমরা একই ঘরে আছি। পদবির জন্য প্রতিযোগিতা হতে পারে। ভিতরে অনেক কিছু থাকতে পারে। তার অর্থ খুনোখুনি নয়, মারামারি নয়।’ তিনি বলেন, ‘নাছির ভাই এখানে আছেন, তার কাছে আমাদের দাবি থাকবে। সেই দাবি উনি চেষ্টা করবেন আদায় করতে। এই সভায় দাঁড়িয়ে আমি তাকে আশ্বস্ত করছি, তাকে আমি সবরকম সহযোগিতা করব।’ নাছির উদ্দিন এ সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্যকে স্বাগত জানান। তবে মুজিবনগর দিবসের বাইরে আর কোনো প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।

বর্ধিত হারে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়, পাথরঘাটা ফিশারিঘাট থেকে মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র সরানো, আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ নিয়ে মেয়রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছেন মহিউদ্দিন। সাত দিনের মাথায় নগর আওয়ামী লীগের মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় দুই নেতা আবারও একমঞ্চে বসলেন। গণমাধ্যম এই আলোচনা সভা নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কা করছিল। মুজিবনগর দিবসের আলোচনায় মহিউদ্দিন, নাছির এবং নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম ছাড়া আর কোনো নেতা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি।

 

সর্বশেষ খবর