শিরোনাম
বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাণিজ্যের নতুন খবর

বাংলাদেশি পণ্যের বাজার হবে ‘সেভেন সিস্টার’

২০ বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টির সুযোগ কমবে বাণিজ্য ঘাটতি

মুহাম্মদ সেলিম, ত্রিপুরা (ভারত) থেকে ফিরে

বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার হতে পারে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এ সাত রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় সেখানে একচেটিয়া বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশি পণ্যের। প্রতিবছর ২০ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে এ রাজ্যগুলোতে। এসব রাজ্যে রপ্তানি বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ-ভারতে কমবে বাণিজ্য ঘাটতি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাড়বে রপ্তানি আয়। ভারতের এ সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারলে উপকৃত হবে দুই দেশ। তাই বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুই দেশের সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা। ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, ভৌগোলিক কারণে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে  বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ত্রিপুরা হতে পারে ‘গেটওয়ে’। বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে কয়েক বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা আমূল পরিবর্তন হবে। বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে ত্রিপুরার রাজ্য সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে। এফবিসিসিআইর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম তালুকদার বলেন, ভারতের সাত রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের আগেই যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন করতে হবে। ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন ব্যবসায়ী। এসব সমস্যা সমাধানে দুই দেশের সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ত্রিপুরার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভৌগোলিক কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সাত রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলের সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত না হওয়ায় দিল্লিসহ অন্যান্য রাজ্য থেকে পণ্য পরিবহন করতে কয়েক দিন লেগে যায়। অন্য রাজ্য থেকে পণ্য পরিবহন করতে অতিরিক্ত খরচ হয় সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। যদি বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহন সহজতর হয় পণ্য পরিবহন খরচ অনেকাংশ কমে আসবে। রাজ্যগুলোর অধিবাসীরা বর্তমানের চেয়ে অনেক কম মূল্যে কিনতে পারবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। প্রায় পাঁচ কোটি জনসংখ্যার এ সাত রাজ্যে প্রতিবছর ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। নানা সমস্যা কাটিয়ে এ বাজার ধরতে পারলে এটিও হতে পারে বাংলাদেশি পণ্যের আরেকটা বড় বাজার।

ত্রিপুরায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক হাকিম আলী বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে হলে ভারতের আমদানিকারকদের ১১০ শতাংশ টাকা দিয়ে এলসি খুলতে হয়। বাংলাদেশি রপ্তানিকারককে প্রতিবছরই দিল্লি থেকে লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এ ছাড়া রুপি-ডলার-টাকা রূপান্তর করতে গিয়ে কমে যায় টাকার পরিমাণ। এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলে সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ আরও সহজ হবে। ত্রিপুরার চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি এম এল দেবনাথ বলেন, ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সাত রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা যতটা কঠিন। বরং এর চেয়ে অনেক গুণ সহজ বাংলাদেশের সঙ্গে। মূল ভূখণ্ড থেকে এ সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহন করতে গেলে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত দিন। তাই এ সাত রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি করলে রাজ্যবাসী কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশেরও রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এতে দুই দেশই উপকৃত হবে। তাই দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া।

 

সর্বশেষ খবর