বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
শিল্পে বিনিয়োগ

সেবায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

বিদ্যুৎ পেতে লাগে ৪০৪ দিন, জমি নিবন্ধনে ২৪৪ দিন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সেবায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

শিল্প খাতে কোনো বিনিয়োগ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিতে চাইলে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেখানে ১৮ দিন, সিঙ্গাপুরে ৩১ দিন এবং পার্শ্ববর্তী ভুটানে ৬১ দিন সময় লাগে সেখানে বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশে এই বিদ্যুৎ পেতে সময় লাগে ৪০৪ দিন। খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই তুলনামূলক চিত্রটি তৈরি করে গতকাল এক সভায় উপস্থাপন করেছে।

সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস অ্যান্ড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার জন্য তৈরি করা এই তুলনামূলক চিত্রে বিদ্যুৎ ছাড়াও জমি রেজিস্ট্রি, ঋণ প্রাপ্তি, প্রকল্প অনুমোদন এবং ব্যবসা শুরু সংক্রান্ত সেবায় বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশের এই পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শুরু করতে দেশে তিন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের সময় বেশি লাগে, অনেকগুলো প্রক্রিয়া পার হতে হয় এবং খরচও অনেক বেশি করতে হয়। তুলনামূলক চিত্রটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে জমি নিবন্ধন সম্পন্ন করতে যেখানে ২৪৪ দিন সময় লাগে, সেখানে এই কাজটি করতে সিঙ্গাপুরে সাড়ে ৪ দিন, নিউজিল্যান্ডে এক দিন, দক্ষিণ কোরিয়ায় সাড়ে ৬ দিন এবং ভুটানে ৭৭ দিন সময় লাগে। ব্যবসা শুরু করতে বাংলাদেশে সাড়ে ১৯ দিন সময় লাগলেও সিঙ্গাপুরে আড়াই দিন, নিউজিল্যান্ডে ১২ ঘণ্টা, দক্ষিণ কোরিয়ায় চার দিন এবং ভুটানে ১৫ দিন সময় লাগে। নির্মাণ কাজ শুরুর অনুমতি নিতে সিঙ্গাপুরে ২৬ দিন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮ দিন, ভুটানে ১৫১ দিন লাগলেও বাংলাদেশে লাগে ২৭৮ দিন। প্রতি বছর সিঙ্গাপুরে একজন ব্যবসায়ীর ট্যাক্স পরিশোধে ৮৩ ঘণ্টা, ভুটানে ৮৫ ঘণ্টা ব্যয় হলেও বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ীকে ব্যয় করতে হয় ৩০২ ঘণ্টা। এসব সেবায় সময়ের পাশাপাশি ব্যয়েরও একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখা। দেখা যাচ্ছে— ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়ের ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় হলেও সিঙ্গাপুরে ০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ভুটানে ৪ শতাংশ ব্যয় হয়। বিদ্যুৎ পেতে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়ের ৩২২৯ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয় হলেও সিঙ্গাপুরে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভুটানে ৫৫০ শতাংশ ব্যয় হয়। জমি নিবন্ধন করতে বাংলাদেশে জমির মোট মূল্যের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হলেও এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, নিউজিল্যান্ডে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এবং ভুটানে ৫ শতাংশ ব্যয় হয়। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশ এভাবে আর বেশিদিন পিছিয়ে থাকতে চায় না। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে সক্ষমতায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৭৮তম। রূপকল্প-২০২১ এ এই অবস্থান ১০০ এর নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি সেবায় উন্নতির একটি টার্গেট ধরা হয়েছে। যেমন— ব্যবসা শুরু করতে এখন যেখানে প্রায় ২০ দিন লাগছে সেটি কমিয়ে সাড়ে ৭ দিনে আনা হবে। নির্মাণ অনুমোদনের সময় ২৭৮ দিন থেকে কমিয়ে ৯৫ দিনে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ৪০৪ দিনের সময়সীমা ১০০ দিনে এবং জমি নিবন্ধনের সময়সীমা ২৪৪ দিনের পরিবর্তে ৭৭ দিনে নামিয়ে আনার টার্গেট বা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইজি অব ডুয়িং বিজনেস অ্যান্ড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন শীর্ষক সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অবস্থান ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দফতর/সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। যে সব বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি সম্পৃক্ত নয় সে সব বিষয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা প্রভাবক হিসেবে এ মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর