বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
রাজনীতি

সব পক্ষকে খুশি রাখার চেষ্টা নগর বিএনপিতে

নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে শোডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটিতে সব পক্ষকেই খুশি রাখার চেষ্টা হয়েছে। তবে কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। পদবঞ্চিত হয়েছেন বিগত সময়ে আন্দোলনে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা। নবগঠিত কমিটিতে সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছেন ঢাকার প্রভাবশালী নেতা সাদেক হোসেক খোকার অনুসারীরা। কমিটিতে তুলনামূলক কম জায়গা পেয়েছেন আরেক প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের অনুসারী। তালিকা দেওয়া হলেও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সমর্থকদের রাখা হয়নি। তবে কমিটিতে বিএনপির তিনজন প্রভাবশালী নেতার সমর্থকরা জায়গা করে নিয়েছেন উল্লেখযোগ্যহারে। সোমবার মধ্যরাতে হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ৭০ সদস্যের এবং এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি ও আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তরে ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোডাউন করে মহানগরের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ কয়েকশ নেতা-কর্মী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। নতুন কমিটিতে অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের চেয়ারপারসনের তত্ত্বাবধানে এ কমিটি দুটি গঠন করা হয়েছে। এবারের কমিটিতে অনেক তরুণ নেতৃত্ব স্থান পেয়েছে। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অতীতের মতো আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন তারা। কমিটির শূন্যপদগুলো যোগ্যদের দিয়ে পূরণ করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা নতুন কমিটিতে এসেছেন তারা যদি সবার সহযোগিতা নেয় এবং সবাই যদি সহযোগিতা করে তাহলেই আগামী দিনে আন্দোলন সংগ্রামে এ কমিটিই সফল হবে।’ মহানগর কমিটির শীর্ষ পদে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ছিটকে পড়েন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ আবদুস সালাম সমর্থকরা। তার ঘনিষ্ঠজনেরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মহানগর থেকে বাদ পড়ায় সালাম রাজনীতি থেকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে সাবেক কমিশনার নবী উল্লাহ নবী পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে আরও কয়েক নেতা যোগাযোগ করে একই ইচ্ছা পোষণ করেছেন। কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নতুন কমিটিতে সিনিয়র ও সক্রিয় অনেককে বাদ দেওয়া হলেও নিষ্ক্রিয় এবং জুনিয়রদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। বিএনপির কয়েক নেতা তার ছেলেকেও গুরুত্বপূর্ণ পদে এনেছেন। ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়েছে। মহানগরের অনেক সিনিয়র নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বা প্রত্যাশিত পদে রাখা হয়নি। তেজগাঁওয়ের সাবেক কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে কোনো পদ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। আনোয়ার ছাড়াও কমিটিতে মোজাম্মেল হক মুক্তা, হাজী লিয়াকত আলী, এম এ সামাদ, হাজী মোজাম্মেল হোসেন শিকদার, বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল কাদের, এম শাহেদ মন্টু, শ্যামপুর থানা সভাপতি মজিবুর রহমান খান, প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ, সাবেক সংসদ সদস্য এস এ খালেক, মিরপুরের নেতা দেলোয়ার হোসেন দুলু, মিরপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুল মতিন, উত্তরা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাম সরকার, বিমানবন্দর থানার সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন, দারুস সালাম থানার হাজী আবদুর রহমান, সাবেক কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহ আলী থানার সাধারণ সম্পাদক ডা. আনিসুর রহমান মিল্টন, চঞ্চল, রিপন, শাহ আলমসহ অনেক ত্যাগী নেতাকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়েছেন সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক মুক্তা (গোপীবাগ), সাবেক কমিশনার হাজী লিয়াকত আলী (দক্ষিণ মৈসুন্দি), সাবেক কমিশনার এম এ সামাদ (কোতোয়ালি), সাবেক কমিশনার হাজী মোজাম্মেল হোসেন শিকদার (পোস্তাগোলা), বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল কাদের (গেন্ডারিয়া), এম শাহেদ মন্ট ু(সূত্রাপুর), শ্যামপুর থানা সভাপতি মজিবুর রহমান খান, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ (কলতাবাজার) প্রমুখ। বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, দুই মহানগরের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। কেউ কেউ এখনো দেশের বাইরে, কেউ জেলে। আবার যারা বাইরে রয়েছেন, তাদের অনেকেই পলাতক। এখন মামলা-হামলার পাশ কাটিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সংগঠনে গতি আনাই নতুন নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ। এদিকে প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনাকে দক্ষিণের সহসভাপতি, পিন্টুর বোন ফেরদৌসী আখতার মিষ্টিকে উত্তরের সহসভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিনকে দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।  জানা গেছে, নতুন কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে নেতারা অভিযোগ করেছেন। দক্ষিণের ১৯টি যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে মকবুল ইসলাম টিপুর স্থান ১০ নম্বরে। তার উপরে ৯ জনই মহানগরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার কনিষ্ঠ। দক্ষিণের সহসভাপতি পদেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের একই অভিযোগ রয়েছে। নবী উল্লাহ নবীর ওপরে ইউনুস মৃধা, সাজ্জাদ জহিরের ওপরে ফরিদ উদ্দিন, নাসিমা আখতার কল্পনা, আবু মোতালেব, আরিফুর রহমান আরিফের ওপরে তানভীর আদেল খান বাবু, মোশাররফ হোসেন খোকনের ওপরে ইশরাত মির্জা ও নিতাই চন্দ্র ঘোষের নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে। দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ক্ষোভ, দুঃখ থাকবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ে সবাইকে নিয়েই আগামীর আন্দোলন করা হবে। তাছাড়া যারা পদ পায়নি তাদের এখনো অনেক সুযোগ আছে। সে ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে।’ সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, ‘দেশের এই কঠিন সময়ে দলের হাইকমান্ড তার ওপর যে আস্থা রেখেছেন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তা পূরণ করার চেষ্টা করব।’ এক বিদেশি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নতুন সভাপতি এম এ কাইয়ুম। দেশের বাইরে থেকে গতকাল মোবাইল ফোনে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমার ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করব। খুব শিগগিরই আমি দেশে ফিরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করব। এদিকে গত মধ্যরাতে মির্জা ফখরুল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর উত্তরে আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে প্রথম যুগ্মসম্পাদক এবং এজি সামছুল ইসলামকে দ্বিতীয় যুগ্মসম্পাদক হিসেবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।

সর্বশেষ খবর