শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
মডেল রাউধার মৃত্যু

সিসিটিভির ফুটেজ জব্দ সিআইডির

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

যে ফ্যানে ঝুলে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ও মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফ আত্মহত্যা করেছেন বলে বলা হচ্ছে, তা পরীক্ষার জন্য খুলে নিয়ে গেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পাশাপাশি পুরো হোস্টেলের সিসিটিভির ফুটেজও জব্দ করা হয়েছে। গতকাল সকালে সিআইডির একটি দল নগরীর নওদাপাড়ায় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে তদন্ত করতে যায়। এ সময় রাউধার কক্ষের ফ্যান ও সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করা হয়। সিআইডি কর্মকর্তারা এদিন হোস্টেলের অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে কথাও বলেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা হোস্টেল থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় সিআইডির রাজশাহী বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ফ্যান জব্দ করা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, এই ফ্যানে ঝুলেই রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তাই আমরা ফ্যানটি পরীক্ষা করে দেখব। এ জন্য ফ্যানটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যানে যদি ৫০-৫৫ কেজির কিছু ঝোলে, তবে সেখানে একটি চাপ পড়বে। যারা চাপ মাপেন, আমরা তাদের কাছে ফ্যানটি নিয়ে যাব। তারা পরীক্ষা করে দেখবেন, ফ্যানটিতে আদৌ এই চাপ পড়েছে কি না। ফ্যানে কিছু ঝুললে দাগও থাকবে। পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা সে বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে চাই।’ এখন পর্যন্ত রাউধাকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি জানিয়ে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাকে হত্যার বিষয়টি আমরা এখনো কোনোভাবে নিশ্চিত হতে পারিনি। নিশ্চিত হলে বলতাম। চিকিৎসক বলছেন আত্মহত্যা। বাবা বলছেন হত্যা। চিকিৎসকের মতো আমরা সরাসরি আত্মহত্যা বলছি না। ঘটনা যা-ই হোক, আমরা নিশ্চিত হয়েই বলব।’ সিআইডির ২০-২৫ জনের ওই দলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আসমাউল হকও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ফ্যানের পাশাপাশি আমরা হোস্টেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও জব্দ করেছি। ঘটনার আগের ও পরের সিসিটিভির ফুটেজ আছে। কিন্তু ঘটনার দিনের কেন নেই! আমরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। ফুটেজের হার্ডডিস্কটি নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা এটিও পরীক্ষা করব। এতে জানা যাবে, ফুটেজ মুছে ফেলা হয়েছে, নাকি রেকর্ড হয়নি।’ সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে হোস্টেলের ভিতর সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে তাদের সঙ্গে ছিলেন রাউধা আতিফের বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ। হোস্টেল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘রাউধার ঘরের দরজা আটকে সিআইডি কর্মকর্তারা বারবার সজোরে ধাক্কা দিয়ে সেটি খোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দরজা খোলেনি, ভেঙেও যায়নি। তাহলে ঘটনার দিন কীভাবে খুলল! এটা একটা বড় প্রশ্ন।’ তিনি বলেন, ‘সিআইডি কর্মকর্তারা হোস্টেলের ছাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। কেউ দেখেনি রাউধা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। মালদ্বীপের ছাত্রীরা সিআইডিকে বলেছে, লাশ বিছানায় ছিল। পুলিশ আসার আগে কেন লাশ নামানো হলো! এটাও একটা বড় প্রশ্ন। পরীক্ষার আগের রাতে রাউধাকে জুসের সঙ্গে কেন ট্যাবলেট মিশিয়ে খেতে দেওয়া হয়েছিল? কেউ তাকে আগে থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।’ উল্লেখ্য, ২৯ মার্চ মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাউধা এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নীলনয়না রাউধা ছিলেন মালদ্বীপের একজন উঠতি মডেল। ২১ বছরের রাউধার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। লাশ উদ্ধারের দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে, রাউধা দরজা ভিতর থেকে আটকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শিক্ষার্থীরা দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ নামিয়েছেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গে রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্যের দুজনই ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। তাদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে এ প্রতিবেদন মানতে নারাজ রাউধার বাবা। ১০ এপ্রিল তিনি রাজশাহীর আদালতে হত্যা মামলা করেন। এর পর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন। হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাউধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলায় রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। সিরাতের বাড়ি ভারতের কাশ্মীরে। সিরাতের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে এরই মধ্যে তার পাসপোর্ট অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। সিরাত দেশত্যাগ করতে পারবেন না। পাশাপাশি তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদিকে হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসমাউল হক জানিয়েছেন, রাজশাহী মেডিকেলের মর্গেই রাউধার লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তে এবারও গঠন করা হবে মেডিকেল বোর্ড। কিন্তু বোর্ড গঠন করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে লাশ উত্তোলনে বিলম্ব হচ্ছে। তবে দু-তিন দিনের মধ্যে রাউধার লাশ তোলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর