শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

টালমাটাল চালের বাজার

সবজি মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে

মোস্তফা কাজল

টালমাটাল চালের বাজার

বাজার দর

রাজধানীর চালের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে পাঁচ টাকা। বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। এ মুহূর্তেই লাগাম টেনে ধরা না গেলে শুধু বাজার অস্থিরতার কারণে সরকারের সব অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে বলে সচেতন মহলের আশঙ্কা। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে সব ধরনের মাছ, মাংস ও সবজির দাম। বর্তমানে গরু, খাসি, মুরগির মাংস এবং মাছ কিনতে আগের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। পাশাপাশি হাওর এলাকার মাছ যাতে রাজধানীর বাজারগুলোতে ঢুকতে না পারে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা দেশে ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। এর প্রভাবে মোটা চালের বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি গুদাম, মোকাম ও পাইকারি বাজারে বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে মোটা চালের দাম  কোনোভাবেই বাড়ার কথা নয়। হাতে গোনা কয়েকজন মিল মালিকের কারসাজিতে  চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে— এমন অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ীদের। গতকাল সরেজমিন রাজধানীর বাবুবাজার ও বাদামতলীর চালের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল সর্বনিম্ন ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে একই বাজারে একই মানের প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয় ৪২ টাকায়। খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপণ্যটির দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বাজারে মোটা চালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটছে মিনিকেটও। গতকাল প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এর দাম কেজি প্রতি ৪৮ টাকা ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, দেশের বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই চাল কেজি প্রতি ৩৪-৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মোটা চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, যেসব ব্যবসায়ী ও মিল মালিকের পর্যাপ্ত মূলধন ও প্রয়োজনীয় সংরক্ষণাগার রয়েছে মূলত তারাই দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছেন। জানতে চাইলে বাবুবাজারের কাশেম রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে মোটা চাল মজুদ আছে। গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতেই মোটা চালের দাম বাড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মোটা চালের দর ওঠানামা করে মিল মালিকদের প্রভাবে। বর্তমানে মোটা চাল তৈরির উপযোগী ধানের মজুদ তাদের হাতেই বেশি। চাল ব্যবসায়ী রামপ্রসাদ সাহা বলেন, এক মাসের মধ্যে বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসবে। মৌসুম শেষের পথে প্রতিবারই মোটা চালের দাম সামান্য বাড়ে। দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর প্রতিটি নিত্যপণ্যের বাজারে কেজিতে এক-দেড় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলছেন বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি রাশেদ মিয়া।

ঊর্ধ্বমুখী মাছ-মাংস ও সবজি : এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে সব ধরনের মাছ, মাংস ও সবজির দাম। তবে ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। গতকাল সরেজমিন রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের সবজি গত সপ্তাহের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ১৮ থেকে ২০, বেগুন ৬০, শালগম ২৫ থেকে ৩০, করল্লা ৬০, শিম প্রকারভেদে ৪০, টমেটো ৩০, গাজর ২০, মুলা ৩০, শসা ও খিরা ৩০ থেকে ৪০, পেঁপে ২০, বরবটি ৬০, ঢেঁড়শ ৬০, কচুরলতি ৫০, মটরশুঁটি ৭০, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৭০, লালশাক ও পালংশাক ৪০, পুঁইশাক ও ডাঁটাশাক ২০-৩০, মিষ্টিকুমড়া প্রতি পিস ২০, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৩২, প্রতি আঁটি লাউশাক ২৫, লেবু প্রতি হালি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির প্রতিটিতেই ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। এদিকে চলতি সপ্তাহে কেজি প্রতি দেশি পিয়াজ প্রকারভেদে ২৫ টাকায় এবং ভারতীয় পিয়াজ ২০ থেকে ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাওরের মরা মাছ বাজারে অবাধে বিক্রি করায় ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা গেছে। এ ছাড়া গতকাল প্রতি কেজি রুই ৩০০ থেকে ৩৫০, কাতল ৩০০, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৮০, সিলভার কার্প ১৪০ থেকে ১৮০, আইড় ৪০০ থেকে ৫০০, মিনি মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, বাইলা মাছ প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৪০০, বাইন মাছ ৪০০ থেকে ৫০০, গলদা চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৮০০, পুঁটি ১৮০ থেকে ২০০, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০, মলা ৩২০ থেকে ৩০০, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৫০০, শিং ৪০০ থেকে ৭০০, দেশি মাগুর ৪০০ থেকে ৭০০, শোল ৩৫০ থেকে ৫০০, পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ১৬০, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এ সপ্তাহে ডিমের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান দোকানিরা। প্রতি হালি ফার্মের লাল ডিম ৩০ থেকে ৩২ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৪৬ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৪-৪৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের। রামপুরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও খাসির মাংস কিনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ৪৮০ এবং ৬৫০ টাকায় পাওয়া যেত। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। গেল সপ্তাহে ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক কেজি ওজনের প্রতি পিস কক মুরগি ২৩০ টাকা থেকে ২৬০ টাকায় ও দেশি মুরগি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা রফিক। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর খোলাবাজারে লিটার প্রতি বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৬ থেকে ১০৭ টাকা ও খোলা সয়াবিন ৮৮ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর