শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফেরানো গেল না লাকী আখন্দকে

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

ফেরানো গেল না লাকী আখন্দকে

টানা আড়াই মাস হাসপাতাল জীবন শেষে গেল সপ্তাহে আরমানিটোলার নিজ বাসায় ফিরেছিলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লাকী আখন্দ। এত দিন ভালোই ছিলেন। গতকাল দুপুরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক লাকী আখন্দকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী এরশাদুল হক টিংকু। যিনি লাকী আখন্দকে নিয়মিত দেখভাল করছিলেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বরেণ্য এ শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিএসএমএমইউ-এর সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে অধ্যাপক নেজামুদ্দিন আহমেদের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গেল সপ্তাহে শরীরের অবস্থা উন্নতি হলে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রসঙ্গত, গুণী এই সংগীতজ্ঞ অনেক দিন ধরেই মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে ব্যাংকক থেকে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ দেশে ফেরেন তিনি। সেখানে কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছিল। একই বছরের জুনে আবারও থেরাপির জন্য ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে পরে আর তার সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অসুস্থতার প্রথম থেকেই লাকী আখন্দ ও তার পরিবার কোনোরকম আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণের বিষয়ে বেশ কঠোর ছিলেন। দেশের শীর্ষ শিল্পীদের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে চাইলেও বিনয়ের সঙ্গে লাকী আখন্দ সেটি গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। গুণী কিংবা অভিমানী এই মানুষটি অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় নিজের চিকিৎসা চালাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তবে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এই সংগীতকারের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় ভালোবাসা হিসেবে সেটি তিনি গ্রহণ করেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। লাকী আখন্দের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া, ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’, ‘কি করে বললে তুমি’ ‘লিখতে পারি না কোনো গান, ‘ভালোবেসে চলে যেও না’ প্রভৃতি। লাকী আখন্দ আধুনিক বাংলা সংগীতের খ্যাতিমান শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। শৈশব কেটেছে ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে। শৈশবেই তার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এইচএমভি পাকিস্তানে সুরকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। সুরকার হিসেবে আরও কাজ করেছেন এইচএমভি ভারত এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পরপর নতুন উদ্যমে বাংলা গান নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। তার নিজের সুর করা গানের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। শিল্পীর সহোদর ক্ষণজন্মা হ্যাপী আখন্দের সঙ্গে ছিল তার আত্মার সম্পর্ক। ভাইয়ের মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। দুজনের যৌথ প্রয়াসে সূচিত হয়েছিল বাংলা গানের এক নতুন ধারা।

সর্বশেষ খবর