শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বাংলাদেশের মাটিতে সৌদি খেজুর

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

বাংলাদেশের মাটিতে সৌদি খেজুর

সৌদি আরবের খেজুর এবং খেজুরগাছের চারা এখন বাংলাদেশের মাটিতেই আবাদ হচ্ছে। এরই মধ্যে আগ্রহীরা সৌদি খেজুরের বাগান গড়ে তুলেছেন। তা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে অবিকল সৌদি খেজুর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের  আবহাওয়াতে উন্নত জাতের সৌদি খেজুর চাষ করা সম্ভব—সেটি কয়েক বছর আগেই প্রমাণ করেছিলেন দেশের কয়েকজন সফল চাষি। এরপর অনেকেই উৎসাহী হয়ে সৌদি খেজুরের আবাদ শুরু করেন এবং নতুন নতুন খেজুর বাগান গড়তে থাকেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ খেজুর চাষ করলে প্রয়োজন সৌদি খেজুর গাছের চারা। সৌদি থেকে এ চারা এনে গড়ে দেশের মাটিতে গড়ে তোলা হয়েছে খেজুর চারার নার্সারি। সেখান থেকে উৎপাদন হচ্ছে চারা। এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গাজীপুরের ভাওয়াল এলাকার এক চাষি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমানের ছেলে নজরুল ইসলাম বাদল। চারা উৎপাদনে তিনি ‘সৌদি ডেট পাম ট্রিস ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি নার্সারি গড়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি আগ্রহীদের সৌদি খেজুর চাষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। শুধু চারা বিক্রির জন্য নয়, মানুষ যাতে খেজুর বাগান করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারে, সে জন্যই এ নার্সারি গড়েছেন। বাদল জানান, সাধারণত সৌদি খেজুর গাছে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল ধরে এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। ২০০৩ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে বিএসসি অনার্স পাস করেন নজরুল ইসলাম বাদল। এরপর গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের পাশে জয়দেবপুর রোডে একটি মোবাইল সামগ্রীর দোকান চালু করেন। বর্তমানে এ ব্যবসা সচল থাকলেও খেজুর বাগানের দিকে তার মনযোগ বেশি। বাদল জানান, ২০১৪ সালে ১৮টি চারা গাছ সংগ্রহ করে ১০ কাঠা জমি নিয়ে প্রথমে বাগান শুরু করেন। নাম দেন ‘সৌদি ডেট পাম ট্রিস ইন বাংলাদেশ’। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে তিনটি, দুবাই থেকে ১০টি, ভারত থেকে দুটি ও কুয়েত থেকে দুই বছর বয়সী তিনটি চারা বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। ১৮টি চারা ক্রয় করতে সাত লাখ ২০ হাজার টাকা লেগেছিল। এ কাজে নামার পর কেউ কেউ তাকে পাগলও বলত। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আড়াই একর জমিতে ১০০ বড় গাছসহ ছোট, মাঝারি সাইজের ছয় হাজার চারা গাছ রয়েছে। বিভিন্ন উপায়ে দুই হাজার চারা গাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি চার হাজার গাছ বিদেশ থেকে উন্নতমানের খেজুর এনে এর বীজ থেকে নিজস্ব নার্সারিতে পলিব্যাগে রোপণ করে তৈরি করা হয়েছে।’ বর্তমানে তার বাগানে বড় ১১টি ও মাঝারি সাইজের মোট ৩০০টি গাছে খেজুর ধরেছে এবং ছয়টি জাতের খেজুর চারা রয়েছে। এর মধ্যে আজওয়া, আনবারা, সুক্কারি, রুথান, বারহি ও মরিয়ম জাতের চারা রয়েছে। বাদল বলেন, ‘উৎপাদিত খেজুরের স্বাদ এবং মান দুটোই মানসম্মত।’ তিনি জানান, তার হাত দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় খেজুর গাছের বাগান হচ্ছে। যেসব গাছ রোপণ করা হয়েছে, তার বৃদ্ধিও ভালো। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে ভালো ফলন হবেই। তার মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া যে খেজুর চাষের জন্য উপযোগী, তা দেশি খেজুরগাছই প্রমাণ করে। আর সৌদির জাতগুলোকে একটু আলাদাভাবে যত্ন নিলে যে ভালো ফলন আসে—তা এরই মধ্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাদল জানান, তার খেজুর বাগানে এখন আঁকার ভেদে বিভিন্ন দামের চারা গাছ রয়েছে। চলতি মাসে এক লাখ টাকা দামে খেজুর ধরা মোট ৩৫টি গাছ বিক্রি করেছেন। এই আকারের আরও গাছ বিক্রির বাকি আছে। এ ছাড়াও গত দুই মাসে তিন বছর বয়সী চারা পাঁচ হাজার টাকা করে আট লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তিনি এক বছর বয়সী চারা দুই হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন। যাতে বিক্রি বেশি হয় এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সবমিলিয়ে তিনি ৫০ লাখের বেশি টাকার চারা বিক্রি করেছেন বাগান শুরুর পর থেকে। চলতি মাস থেকে চারা গাছের দাম তুলনামূলক কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের গাজীপুরের উপ-পরিচালক মো. মাসুদ রেজা বলেন, সৌদি খেজুর বাগানের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময়। এ ক্ষেত্রে মাতৃগাছ থেকে শাখা কলম পদ্ধতির মাধ্যমে চারা নির্বাচন করতে হবে। তাতে ফলনের সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।

সর্বশেষ খবর