রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আসছে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের বাজেট

মানিক মুনতাসির

আসছে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের বাজেট

আসছে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের বাজেট। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এই বাজেটের মূল আকার হতে পারে ৪ লাখ ২০০ কোটি টাকার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত  আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাজেটের এই আকার হতে পারে। যদিও অর্থমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, নতুন বাজেট হবে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। নতুন বছরের বাজেটের আকার চলতি বছরের তুলনায় ৫৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা বেশি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথ-নকশাও থাকতে পারে এই বাজেটে। নতুন অর্থবছরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতির চাপকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ বিভাগের একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে। এই আইন অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। এই ভ্যাট পক্ষান্তরে জনগণের কাছ থেকে আদায় করা হবে। ফলে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মাত্র কয়েক দিন আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় বাড়বে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই আইন কার্যকর হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে এটা যেমন সত্যি, তেমন জনগণের জীবন-যাত্রার ব্যয়ও বাড়বে। ফলে দৈনন্দিন অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণে মানুষ বছরজুড়েই আয় বাড়ানোর চাপে থাকবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, এসডিজি অর্জনের পথ সুগম করতে নতুন অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ জন্য পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রসহ সরকারের নেওয়া ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে পৃথক ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে চান অর্থমন্ত্রী। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের মাধ্যমে একদিকে বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে চান অর্থমন্ত্রী, অন্যদিকে করদাতার সংখ্যা গুণিতক হারে বাড়াতে চান তিনি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা।

আসছে বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করব্যবস্থা থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এতে করে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ দশকি ৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে বিশাল পরিমাণ এই রাজস্ব আদায় করা খুব একটা কঠিন হবে না বলে মনে করেন তিনি। জানা গেছে, চলতি বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী সমতা ও ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার দেশের সব অঞ্চলে সমতার ভিত্তিতে উন্নয়নের পরিকল্পনাও নিতে যাচ্ছে। ফলে আগামী বাজেটেও সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য নিরসনের কথা বলবেন অর্থমন্ত্রী। এ জন্য কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। অধিক সংখ্যক মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা দিতে এবং বৈষম্য কমিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। এ খাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে ৫২ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি আসছে বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে। ঋণ পরিশোধ, প্রণোদনা এবং ভর্তুকি খাতের জন্য ২৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হতে পারে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা কার্যকর হলে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি কমে আসবে। যা বাজেটের সামগ্রিক ভর্তুকি কমিয়ে আনবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।  এদিকে বিশাল আকারের বাজেটে ঘাটতিও থাকবে অনেক বেশি। তবে ঘাটতি বাজেট নিয়ে কখনই চিন্তিত নন অর্থমন্ত্রী। তার দর্শন অনুযায়ী অনেক উন্নত দেশও ঘাটতি বাজেট দিয়ে থাকে। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপি ১৯ লাখ ৬১ হাজার ১৭ কোটি টাকার ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণের জন্য বরাবরের মতোই বৈদেশিক উেসর পাশাপাশি দেশীয় ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেবে সরকার। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঘাটতি অর্থায়ন করে থাকে সরকার। তবে চলতি বছরের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও তা নেয়নি সরকার। বরং পূর্বের বকেয়া ঋণ পরিশোধ করেছে। এদিকে বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেননা চলতি বছরের বিশাল আকারের এডিপি ৯ মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। প্রতি বছরই বিশাল আকারের বাজেট ঘোষণা করার পর তা কাটছাঁট করে কমানো হয়। এমনকি বছর শেষে বাজেটে বরাদ্দ ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন দেখানো হলেও বাস্তবে তা ৭৫ শতাংশ বেশি বাস্তবায়ন হয় না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ খবর