শিরোনাম
রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বৃষ্টি নামলেই আতঙ্ক চট্টগ্রামে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

২০০৭ সালের ১১ জুন। চট্টগ্রামে অতিবর্ষণে পাহাড়ধসে এক সকালে ঝরে পড়েছিল ১২৭টি প্রাণ। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট  ঝরে পড়ে ১১ প্রাণ, ২০০৯ সালে ১৭ জন, ২০১০ সালে ৩ জন, ২০১১ সালের ১ জুলাই বাটালি হিলে প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জন, ২০১২ সালের পৃথক চার স্থানে পহাড় ধসে ২৪ জন, ২০১৩ সালে ১ জন, ২০১৪ সালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে ৫ জনের মৃত্যু হয়।  

এভাবে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে রুটিন-কাজের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ধসে মৃত্যু ঘটছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমের আগে নিয়ম করে বৈঠক হয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির। বৈঠকে নানা সিদ্ধান্ত হয়, আলোচনা-সমালোচনাও হয়। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে উচ্ছেদে চলে অভিযান। কিন্তু বৃষ্টি কমতেই সব চেষ্টা-প্রক্রিয়া যেন হিমাগারে চলে যায়। ফলে প্রতিবছরই যোগ হচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, এই বছর নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এটি প্রণয়ন শেষ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছিয়া খাতুন বলেন, বর্ষাকে সামনে রেখে আমরা দুই দফা অভিযান চালিয়ে দেড় শত অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি। তা ছাড়া তাদেরকে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধও করা হয়। তবে কম ভাড়া ও নানা সুবিধার কারণে তারা এ সব অবৈধ বাসা ছাড়তে চান না। তিনি বলেন, শুক্রবারের অতি বর্ষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় নিয়ে আমরা পর্যবেক্ষণে আছি। সেখানে পরিদর্শন করতে আমাদের কর্মীও পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আগামী বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ধসের ২৮টি কারণ উল্লেখ করেছিল। এর মধ্যে ছিল— ভারি বর্ষণ, পাহাড়ে বালির আধিক্য, পাহাড়ের উপরিভাগে গাছ না থাকা, গাছ কেটে ভারসাম্য নষ্ট করা, পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস গড়ে তোলা, পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রাখা, বনায়নের পদক্ষেপ না থাকা, বর্ষণে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালি ও মাটি অপসারণে দুর্বলতা।

ঝুঁকিপূর্ণ ১১ পাহাড় : পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল জেলা প্রশাসন জরিপ চালিয়ে ১১টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে। এগুলো হলো— সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশ, টাইগারপাস-লালখান বাজার রোড সংলগ্ন পাহাড়, মতিঝর্ণা, বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুল পাহাড়, আকবর শাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়, ফয়স লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, গরীবুল্লাহ শাহ্ মাজারের পাশে বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি পাহাড়, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়, ডিসি হিলের চেরাগি পাহাড়ের দিকে ফুলের দোকানসমূহের অংশ ও পরিবেশ অধিদফতর সংলগ্ন সিটি করপোরেশন পাহাড়।

সর্বশেষ খবর