রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

পতিত জলাভূমিতে ফসলের বিপ্লব

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

পতিত জলাভূমিতে ফসলের বিপ্লব

‘এইখানে আগে পতিত জলা ছিল, কিচ্ছু হইতো না। পাঁচ-সাত বছর যাবত এইগুলা আমরা লিজ নিয়া চাষবাস করছি। বর্ষায় কচুরিপানা দিয়ে ধাপ তৈরি করি। তারপর সেখানে বিচি লাগাই। তারপর জল কমতে থাকে, তখন এক সময় ওই ধাপ এক্কেবারে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এই সময় গাছও দাঁড়াইয়া যায়। এহন লালশাক, বাঁধাকপি, ওলকপি, কচু, শসা, ক্ষিরাই, ঢেঁড়শ, ওস্তা-করল্লা এইসব চাষ হয়। লাউ-কুমড়ার চাষও একইভাবে করি।’

মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণকান্দি গ্রামের সুনীল ভক্ত পোকভাঙ্গার বিলে নিজের লিজ নেওয়া জমিতে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন। সরেজমিন পোকভাঙ্গার বিলে তার খামারে (আগে যেখানে পতিত জলাভূমি ছিল) গিয়ে দেখা যায়, লাউ-কুমড়া ও কচুর বাম্পার ফলন। সঙ্গে আছে লালশাক, বাঁধাকপি, ওলকপি ও মাছের ঘের। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সুশীল ভক্ত বলেন, ‘আমি পাঁচ কানি (১৫ একর) জমিতে এই ধাপে চাষ করি।’ তিনি জানান, এই জমির লিজ নিয়েছেন। ধাপের ওপর যে চারা হয় তা আলাদা করে বিভিন্ন সময় হাট-বাজারে বিক্রি করেন। চারা কিনে গৃহস্থরা বাড়িতে লাউ-কুমড়ার গাছ লাগান। সুশীল এক-একটা চারা ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন।

পাশেই কাজ করছিলেন রামচরণ দাস। তার কাছে এই জলাভূমিতে চাষের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধাপের ওপর চাষ করতে পারি কপি, মুলা, টমেটো, লাউ-কুমড়া। আমার নিজস্ব তিন-চার বিঘা জমিতে এবং লিজে কিছু জমি নিয়ে আমি বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ করতে পারি।’ তিনি আরও জানান, পোকভাঙ্গার বিলে তাদের দেখাদেখি পাশের একটি জলায় চাষ করে বনমালী, শুকচাঁন বৈদ্য, অমল কৃষ্ণ, অতুল বৈদ্য। ওই বিলে চাষ করে এলাকার সুখচাঁন শেখ, জয়দেব বেপারীসহ আট-নয়জন, আর ওই পাশের বিলে করে কয়েকজন। মোট ২০-২৫ জন চাষবাস করেন। মাদারীপুর সদরের পোকভাঙ্গার বিল, মস্তফাপুরের জইয়ার বড়খালপাড় বিল, বোলকী, নাররুই বিল, রাজৈর উপজেলার লাউশ্বার বিল, বাইঘ্যার বিল, রামনগর বিল, কোটালীপাড়ার বিল এলাকায় অনেক কৃষকই এভাবে চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এবং পতিত জলাভূমিতে ফসল চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, কচুরিপানা ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের সমন্বয়ে ভাসমান ধাপ তৈরি করা চাষাবাদ পদ্ধতি পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। শুকনো মৌসুমে ধাপের পচলা বা কম্পোস্ট উন্নতমানের জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব। এতে বিল এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

মাদারীপুর পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সংস্থার আহ্বায়ক বশীর আহম্মদ জানান, জলাভূমিতে কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ দিয়ে ভাসমান ধাপ তৈরি চাষাবাদের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত।

সর্বশেষ খবর