মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভোগান্তির শেষ নেই দুই শহরে

টানা বৃষ্টিতে বিপর্যয়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমাহীন দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা বৃষ্টিতে বিপর্যয়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমাহীন দুর্ভোগ

রাজধানীতে গতকাল বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা তিন দিনের অকাল বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকায় জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলো এখন পানিতে থৈ থৈ। গ্রীষ্মের প্রস্তুতিহীন টানা বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায়ও তীব্র দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কারণে মালিবাগ-মৌচাক সড়কের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় হাঁটুপানি জমে তা মৌচাক মার্কেটে ঢুকে গেছে।

মগবাজার, মিরপুর, মতিঝিলসহ আরও অনেক এলাকার রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় মানুষ সীমাহীন কষ্টে পড়েছে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নগর জীবন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে নগরীর অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেন থেকে আবর্জনা উঠে সড়কে ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনো সড়কে হাঁটুপানি। ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কারে পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে রাস্তা। একবার কোথাও পানি জমলে তা সহজে সরছে না। পানিতে ডুবে থাকায় রাস্তাগুলোও ভেঙে একাকার হয়ে পড়ছে। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। সকালে জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের হাঁটুপানি ডিঙিয়ে যেতে হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার থেকে থেমে থেমে টানা বর্ষণ। বৃষ্টির ভোগান্তির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে পরিবহন সংকটও। সুযোগ পেয়ে রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা হাঁকছেন দু-তিন গুণ ভাড়া। রাজধানীর গুলিস্তান, মগবাজার, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, গ্রিন রোড, খিলগাঁও, বনশ্রী, গুলশান, বারিধারা, মাদারটেক, মাতুয়াইল, জুরাইন, বাসাবো, গোরান, মিরপুর, পল্লবীসহ বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের নিম্নাঞ্চলে পানি জমেছে। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো উন্নয়নকাজের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে ভোগান্তিও চরম আকার ধারণ করেছে। ফুটপাথে কাজ চলায় এবং সেসব সরঞ্জাম ফুটপাথজুড়ে ফেলে রাখায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সবাইকে। নগরীর রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্ব রোড পর্যন্ত ফুটপাথ খুঁড়ে ড্রেনেজ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এই এলাকায় গত তিন দিনে খানাখন্দে পানি জমে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ার প্রধান সড়কে প্রায় হাঁটুপানি জমে থাকতে দেখা যায়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাজধানীর ভাসমান মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। তারা ফুটপাথের অস্থায়ী আস্তানায় অমানবিক জীবনযাপন করছে। আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, আজও সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশেই বজ্রসহ ভারি বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, ডিএসসিসির উন্নয়নকাজের ফলে গত বছরের চেয়ে এবার জলাবদ্ধতা অনেক কম। পুরো কাজ বাস্তবায়ন হলে আগস্টের মধ্যে জলাবদ্ধতা থাকবে না। গতকাল দুপুরে বৃষ্টি-পরবর্তী রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র এ কথা বলেন। তিনি বলেন, শান্তিনগরে চলতি বর্ষা মৌসুমে ৮৫ ভাগ জলাবদ্ধতা কমেছে। চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ের মধ্যে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হবে। এরপর আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না।

চট্টগ্রামে ফের জলাবদ্ধতা : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রাম মহানগর ফের জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। চলতি মাসেই নগরবাসীকে তিনবার জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়। এর আগে ৪ ও ২১ এপ্রিল অতিবর্ষণ এবং জোয়ারের পানিতে নগরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। গতকালও কোনো কোনো এলাকায় পানি জমে যায়।

গতকাল দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এতে অতীতের মতো নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় পানি ওঠে। এর মধ্যে প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, হালিশহর, আগ্রাবাদ, পোর্ট কানেকটিং রোড, এক্সেস রোড, বেপারিপাড়া, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে পানি জমে যায়।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেন, নগরের কিছু নিচু এলাকায় পানি ওঠে। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী না হওয়ায় জলাবদ্ধতা হয়নি। তিনি বলেন, শুক্রবারের জলাবদ্ধতার পর অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা হয় এমন স্থানে নালা-নর্দমা পরিষ্কার, চাক্তাই খালে অতিরিক্ত স্কেবেটর দিয়ে মাটি খননসহ নানা কাজ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর