মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বাগেরহাটে চিংড়ি খামারে মড়ক

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে চিংড়ি খামারে মড়ক

বাগেরহাটে অজ্ঞাত রোগে সাদা সোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ির হাজার হাজার খামারে মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে চিংড়িচাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এভাবে চিংড়ি মরতে থাকলে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। দুই সপ্তাহ ধরে বাগেরহাট জেলার কয়েক হাজার ঘেরে হঠাৎ করে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়ছে। মৌসুমের শুরুতেই জেলার     অধিকাংশ উপজেলায় খামারের চিংড়িতে মড়ক লেগেছে বলে খামারি ও জেলা চিংড়ি চাষি সমিতি দাবি করেছে। জেলার অধিকাংশ খামারে চিংড়িতে মড়ক দেখা দিলেও চাষিদের তা প্রতিকারে কোনো পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেনি কেউ—সংশ্লিষ্ট মত্স্য বিভাগের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন চাষিরা। তবে কী রোগে খামারে বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না মত্স্য বিভাগ। তারা আক্রান্ত বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ করে রোগ নির্ণয়ের জন্য তা পরীক্ষাগারে পাঠাচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী, এ বছর বাগেরহাটের নয়টি উপজেলায় ৭০ হাজার চিংড়ি খামারে বাগদা চিংড়ির চাষ করা হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় এ বছর বাগদা চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন। উৎপাদিত এই চিংড়ির অধিকাংশই রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। তবে বাগেরহাটে হাজার হাজার চিংড়ি খামারে অজ্ঞাত রোগে চিংড়িশূন্য হয়ে পড়ায় এবার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে চিংড়ি খামার প্রস্তুত করে চাষিরা বাগদার পোনা ছাড়তে শুরু করেন। অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি ইতিমধ্যে ৬৬ গ্রেডের হয়ে গেছে। এই চিংড়ি জ্যৈষ্ঠ মাসে চাষিরা ধরে তা বাজারে বিক্রি করে থাকেন। মৌসুমের শুরুতে চিংড়িতে মড়ক দেখা দেওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বলছেন, চলতি বছর লাভ তো দূরের কথা, অধিকাংশ চাষিকে দেনাগ্রস্ত হতে হবে। একই আশঙ্কা জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির। এই বিপর্যয় কাটাতে চাষিদের মাছ চাষে রাখতে সরকারকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এবং ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের খোন্তাকাটা ও শশীখালীর বিলের অধিকাংশ খামারের বাগদা চিংড়ি মরে রয়েছে। কোনো কোনো চাষি খামারে পানিতে নেমে মরা চিংড়ি তুলে ওপরে ফেলে দিচ্ছেন। আবার অনেকে হতাশ হয়ে পাড়ে বসে আছেন। মরে যাওয়া চিংড়িতে লাল ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলায় চিংড়ি খামারে একই অবস্থা বিরাজ করছে। চাষিরা বলছেন, ‘মৌসুমের শুরুতে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে চিংড়ি ঘের প্রস্তুত করে আমরা বাগদার পোনা ছাড়তে শুরু করি। অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি ইতিমধ্যে ৬৬ গ্রেডের হয়ে গেছে। এই চিংড়ি জ্যৈষ্ঠ মাসে ধরে বাজারে বিক্রি করা শুরু করি। হঠাৎ করে বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করেছে।’ তবে কী কারণে ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরছে তা তারা বলতে পারেননি। এতে তারা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। নতুন করে আবার পোনা ছাড়বেন সে টাকা তাদের কাছে নেই। বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটে হাজার হাজার ঘের অজ্ঞাত রোগে চিংড়িশূন্য হয়ে পড়ায় এবার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সদর, রামপাল, মংলা, মোরেলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এবার মড়ক লাগার বিষয়ে কোনো ঘের মালিক কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। এতে হাজার হাজার চাষি চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জেলার অধিকাংশ চাষি চড়া সুদ ও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে চিংড়ি করে থাকেন। মৌসুমের শুরুতে এমন বিপর্যয় চাষিকে সর্বস্বান্ত করবে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরি করে সরকারকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার জেলায় চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চার ভাগের এক ভাগও উৎপাদন হবে না। বাগেরহাট মত্স্য বিভাগের বিভাগীয় মত্স্য কর্মকর্তা (ডিএফও) জিয়া হায়দার বলেন, মৌসুমের শুরুতে এ এলাকায় বৃষ্টিপাত অনেক কম ছিল। অনাবৃষ্টি ও ঘেরগুলোতে যে পরিমাণ পানি থাকার দরকার, তা ছিল না। আবার হঠাৎ করে অতিবৃষ্টি, প্রচণ্ড দাবদাহ ও তাপমাত্রা কমে পানিতে অক্সিজেন কমে যায়। তাই বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর