বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্মার্টকার্ড বিতরণ, ঢাকার ৪০ ভাগ নাগরিক কেন্দ্রেই যাননি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে স্মার্টকার্ড বিতরণের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও নানা সমস্যায় এখনো অর্ধেক এলাকায় বিতরণের কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া কারিগরি ত্রুটি ও সমন্বয়হীনতায় অনেকে কার্ড না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তির কারণেও কার্ড নিতে যাচ্ছেন না।

রাজধানীর যেসব এলাকায় কার্ড বিতরণ চলছে, সেসব এলাকার প্রায় ২৫ লাখ নাগরিকের মধ্যে মাত্র ১৪ লাখের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আগামী নভেম্বরের মধ্যে রাজধানীতে বিতরণযোগ্য সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রচারের অভাব, ভাসমান ভোটার, স্থানান্তরিত  ভোটার, চাকরিজীবী, কারিগরি ত্রুটি ও সমন্বয়হীনতায় স্মার্টকার্ড বিতরণে আশানুরূপ ফল মিলছে না। নানা কারণে এখনো ৪০ ভাগ নাগরিক কেন্দ্রে উপস্থিতই হতে পারেননি বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম।

গত বছরের ৩ অক্টোবর রাজধানীতে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়। চলতি বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিতরণ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে চোখের আইরিশ ও দশ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬৩ জন নাগরিক স্মার্টকার্ড নিয়েছেন। এটি বিতরণযোগ্য ভোটারের ৫৯ দশমিক ৪৮ভাগ। রাজধানীর পাশাপাশি কুড়িগ্রামে বিতরণ শুরুর পর মার্চে চট্টগ্রাম ও এপ্রিলে রাজশাহীতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার ৫২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৭ ভোটারের স্মার্টকার্ড বিতরণ করবে ১৫টি থানা নির্বাচন অফিস। ইতিমধ্যে কোতোয়ালি, উত্তরা, গুলশান, ধানমণ্ডি, মতিঝিল, সবুজবাগ ও রমনা থানা নির্বাচনী এলাকায় বিতরণ শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে মিরপুর, লালবাগ, ক্যান্টনমেন্ট, মোহাম্মদপুর, ডেমরা, পল্লবী, তেজগাঁও ও সূত্রাপুর এলাকায়। এই ১৫টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ১২টি এলাকায় কার্ড বিতরণের পরিসংখ্যান বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এসব এলাকার ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮টি স্মার্টকার্ডের মধ্যে ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০টি বিতরণ করা হয়েছে। নানা জটিলতায় কার্ড পাওয়া যায়নি এক লাখ এক হাজার ১১৩ জনের। ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, ঢাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণের হার প্রায় ৬০ ভাগ। বাকি ৪০ ভাগ নাগরিক নানা কারণে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কার্ড নিতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ে স্মার্টকার্ড নিতে না পারলেও পরে থানা নির্বাচন অফিস থেকে তা সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি জানান। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক আবদুল বাতেন জানান, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় ৫৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ; কুড়িগ্রামে ৬১ দশমিক ২৪ শতাংশ; চট্টগ্রামে ৫৮ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ৮০ দশমিক ১৫ শতাংশ কার্ড বিতরণ হয়েছে। কেন্দ্রে নাগরিকদের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ভাসমান ভোটার, ফরম পূরণে নাগরিকদের গাফিলতিসহ নানা জটিলতায় অন্তত ৪০ শতাংশ নাগরিকের  কেন্দ্রে উপস্থিতি নেই। এ অবস্থায় সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সুচারুভাবে কার্ড বিতরণের উদ্যোগ চলছে। ফ্রান্সের একটি  কোম্পানি থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৯ কোটি ‘ব্ল্যাঙ্ককার্ড’ আমদানি করে স্থানীয়ভাবে মুদ্রণ ও বিতরণের কার্যক্রম চলছে।

নতুনদের লেমিনেটেড কার্ড ও দেশীয় স্মার্ট কার্ড : জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার  জেনারেল সাইদুল ইসলাম গত ১৭ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নির্বাচন কমিশনের তথ্য ভাণ্ডারে ১০ কোটি ১৭ লাখেরও বেশি নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত আছে। চলমান বিতরণ কার্যক্রমের আওতায় ৩১ জানুয়ারি, ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত নাগরিকদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে নয় কোটি স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে। তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নিবন্ধিত নাগরিকদের লেমিনেটেড পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি। এসব নাগরিকের জন্য আপাতত কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড পরিচয়পত্র দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। আর স্মার্টকার্ড  দেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে সম্পূর্ণ গুণগতমান অক্ষুণ্ন্ন রেখে দেশেই স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র উৎপাদনের প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক।

সর্বশেষ খবর