বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
৭ খুনের ৩ বছর

আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করার দাবি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপহরণ করে সাত খুনের ঘটনা এখনো ভুলতে পারেননি শীতলক্ষ্যার তীরের মানুষ। এ ঘটনায় র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার, প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ টানটান উত্তেজনায় পার হয়ে গেছে পৌনে তিন বছর। গত ১৬ জানুয়ারি ঘোষিত মামলার রায়ের পর এখন নিহতের স্বজনদের প্রত্যাশা দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর হোক। এ ব্যাপারে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি গতকাল বলেন, ‘যাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে তাদের ফাঁসির আদেশ উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে সেটাই এখন প্রত্যাশা। তাহলেই নিহত পরিবারগুলো স্বস্তি পাবে।’ তাজুলের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ‘আমাদের তো কিছু পাওয়ার নেই। যা হারিয়েছি তা তো আর ফিরে পাব না। এখন নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে যে ফাঁসির রায় দিয়েছে সেটা যেন কার্যকর হয়। এখন উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে এটাই আমার চাওয়া ও প্রত্যাশা। এটা শুধু আমাদের পরিবারের না দেশের মানুষের আশা পূর্ণ হয়েছে।’ সাত খুনে নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী নূপুর বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স এখন ২ বছর ১০ মাস। সে তার বাবাকে এখনো খোঁজে। তার বাবার খুনিরা যেন অন্তত ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে পারে- তাহলেই আমরা খুশি। তাহলে অন্তত মেয়ে রওজাকে বলতে পারি, তোমার বাবাকে যারা খুন করেছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে। যখন ফাঁসি কার্যকর হবে তখন খুশি হবো। মনে একটা সান্ত্বনা পাব যে, আমার স্বামীর হত্যার বিচার আমি পেয়েছি। এর আগে মন শান্ত হবে না।’ লিটনের ভাই রফিক বলেন, ‘ফাঁসির রায় হয়েছে তা এখন সারা দেশের মানুষ জানে। আমরাও চাই এ রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকবে এবং সব আসামির দ্রুত রায় কার্যকর করা হবে। তাহলে মন থেকে একটু শান্তি পাব যে, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার আমরা পেয়েছি।’

 নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই রিপন বলেন, ‘নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছে সেটা কার্যকর হবে- সে প্রত্যাশাই করি। যারা মারা গেছে তাদের তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু রায় কার্যকর হলে সবার আত্মা যেমন শান্তি পাবে, তেমনি আমরাও কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করতে পারব।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য উপস্থাপনের কারণে মামলাটি নিম্ন আদালতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমি আশা ও প্রত্যাশা করব উচ্চ আদালতেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখবে।’ বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘নিম্ন আদালতে যে রায় হয়েছে উচ্চ আদালতের ডেথ রেফারেন্সেও সেই রায় বহাল থাকবে- সে প্রত্যাশা করছি। তাহলেই নারায়ণগঞ্জবাসী খুশি হবে।’

যাদের ফাঁসি ও কারাদণ্ড হয়েছে : মৃত্যুদণ্ড আসামিরা হলো গ্রেফতার থাকা প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা (এম এম রানা), হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্ণেন্দ বালা, র‌্যাবের সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার, নূর  হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল। পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান, জামালউদ্দিন, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, আলামিন শরিফ, তাজুল ইসলাম, এনামুল কবীর। এসব আসামির বিরুদ্ধে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

অপহরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে করপোরাল রুহুল আমিনের ১০ বছর, এএসআই বজলুর রহমানের ৭ বছর, হাবিলদার নাসির উদ্দিনের ৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদের ১০ বছর, সৈনিক নুরুজ্জামানের ১০ বছর, কনস্টেবল বাবুল হাসানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। পলাতক আসামিদের মধ্যে হাবিবুর রহমানের ১৭ বছর, কামাল হোসেনের ১০ বছর ও মোখলেসুর রহমানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে।

সর্বশেষ খবর