শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৮ লাখ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৮ লাখ পরিবার

পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় দেশের হাওরাঞ্চলের ছয় জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮ পরিবার। গতকাল হাওর পরিস্থিতি নিয়ে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠকে ক্ষয়ক্ষতির হালনাগাদ এ তথ্য তুলে ধরেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওর এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার আগে এ বৈঠক করা হলো। মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য সচিব ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মহসীন হালনাগাদ তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এতে দেখানো হয়েছে, গত মাসের শেষ দিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা তলিয়ে যায়। বোরো ধান কাটার এই  মৌসুমে হঠাৎ এই বন্যায় লাখ লাখ কৃষকের মাথায় হাত পড়ে। এরপর পানি বিষাক্ত হলে মাছ মরা শুরু হয়; তারপর মরতে থাকে হাঁস। পরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দল ওই এলাকা ঘুরে পানি পরীক্ষা করে বলেন, প্রাথমিকভাবে ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রমাণ তারা পাননি। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের দুই হাজার ৮৬০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৫ হাজার ৩৪৫টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় জেলায় মোট ২১৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে; সুনামগঞ্জে তিন হাজার ৯০২টি হাঁস ও চারটি মহিষ মারা গেছে।

আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘পয়লা এপ্রিল থেকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানির মাত্রা বেড়ে গিয়ে বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকে ফসল তলিয়েছে। এ ছাড়াও জনগণ ধান নেওয়ার রাস্তা তৈরি করতে বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট নিজেরাই কেটেছেন।’ তিনি গতকাল সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের বাঁধ পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, বাঁধ নির্মাণে যারা দুর্নীতি করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। গতবারও বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় আমরা বিল পরিশোধ করিনি। এবারও তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কাজের বিল পরিশোধ করার প্রশ্নই আসে না। তিনি আরও বলেন, হাওরের ফসল রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং পাহাড়ি নদীগুলো ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য বাড়াতে হবে। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ, সংরক্ষিত মহিলা এমপি শামছুন্নাহার বেগম শাহানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে মন্ত্রী তলিয়ে যাওয়া কয়েকটি হাওর পরিদর্শন করেন।

চাল টাকা বিতরণ : সুনামগঞ্জে আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য তিন মাস ৮ দিনের সরকারি সহায়তার প্রথম কিস্তি বিতরণ শুরু হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়ন পরিষদের উপকারভোগীদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম কিস্তির ৩৮ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকা বিতরণ করা হয়। পরবর্তী দুই মাস জেলার দেড় লাখ কৃষককে আরও ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হবে। সর্বস্বান্ত কৃষকের জন্য সরকারি এ সহায়তা কিছুটা উপকারে আসলেও ক্ষতির তুলনায় এটা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তাদের দাবি শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ব্যাপক সরকারি পুনর্বাসনের আওতায় আগামী চৈত্রমাস পর্যন্ত এ জাতীয় কার্যক্রম চালাতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর