মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

নেপোলিয়ানের পর এলেন ম্যাক্রন

প্রতিদিন ডেস্ক

নেপোলিয়ানের পর এলেন ম্যাক্রন

ফ্রান্সের দিগ্বিজয়ী বীর নেপোলিয়ান বোনাপার্টের পর সবচেয়ে তরুণ বয়সে দেশটির ক্ষমতায় বসলেন ইমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা; যার বয়স মাত্র ৩৯ বছর। আর নেপোলিয়ান ফ্রান্সের ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন ৩৫ বছর বয়সে। নতুন নেতা ম্যাত্রেঁদ্ধা যিনি বছরখানেক আগে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। এই সময়ে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের একজন উপদেষ্টা হন। এই সময়ে অর্থাৎ এক বছর আগে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে নিজের রাজনৈতিক দল ‘এন মার্চ’ বা ‘এগিয়ে যাও’ গঠন করেই বাজিমাত করলেন ম্যাত্রেঁদ্ধা। সাবেক ব্যাংকার ম্যাত্রেঁদ্ধা ফরাসি রাজনীতির প্রজন্ম বদলের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন। যে রাজনীতিতে বছরের পর বছর ধরে কতগুলো পরিচিত মুখই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষমতাধর জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে এখন ম্যাত্রেঁদ্ধাই সবচেয়ে তরুণ নেতা। এসব দেশের নতুন-পুরান সব তরুণ নেতার চেয়েও ম্যাত্রেঁদ্ধা তরুণতর। ফ্রান্সের অভিজাত ন্যাশনাল স্কুল অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের স্নাতক ম্যাত্রেঁদ্ধা। এই স্কুল থেকেই ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ শীর্ষ কর্তারা বের হয়ে আসেন। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এর আগে তিনজন ফরাসি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এবার ম্যাত্রেঁদ্ধাকে নিয়ে তা চার-এ দাঁড়াল। স্নাতক শেষ করার পর ম্যাত্রেঁদ্ধা ফ্রান্সের অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফিন্যানশিয়াল ইন্সপেক্টর হিসেবে কাজ করেন। এর বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে রথসচাইল্ড অ্যান্ড সি ব্যাংকে যোগ দেন। ২০০৯ সালে স্বাধীন রাজনীতিক হওয়ার আগে তিনি তিন বছর ফরাসি সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য ছিলেন। পরে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের ব্যক্তিগত কর্মী দলের সদস্য হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালাসের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থ, শিল্প ও ডিজিটাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু দু্ই বছর মন্ত্রিত্ব করার পরই তাতে ইস্তফা দিয়ে ২০১৬ সালে নিজের দল ‘এগিয়ে যাও’ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। তার মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি ফরাসি রাজধানীর প্রতিষ্ঠিত সব ধারাকে ধরাশায়ী করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। উত্তর ফ্রান্সের আমিয়েঁর চিকিৎসক দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া ম্যাত্রেঁদ্ধা তার চেয়ে বয়সে ২৪ বছরের বড় নিজের স্কুলশিক্ষিকাকে বিয়ে করেন। বর্তমানে ৬৪ বছর বয়সী স্ত্রী ব্রিজিতের সাতজন নাতি-নাতনি রয়েছে। ১৫ বছর বয়সে প্রাইভেট স্কুলের বিবাহিত এই শিক্ষকের সঙ্গে ম্যাত্রেঁদ্ধার পরিচয় হয়। ব্রিজিতের মেয়ের ক্লাসমেট ছিলেন ম্যাত্রেঁদ্ধা। কিন্তু ম্যাত্রেঁদ্ধা তার শিক্ষিকার প্রেমে পড়েন। ১৮ বছর বয়সে ব্রিজিতের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম শুরু করেন ইমানুয়েল। ২০০৭ সালে ব্রিজিতকে বিয়ে করেন তিনি। সে সময় ইমানুয়েলের ৩০ বছরের বিপরীতে ব্রিজিতের বয়স ছিল ৫৫। এখন ইমানুয়েলের বয়স ৩৯ আর স্ত্রী ব্রিজিতের বয়স ৬৪। এই অসম বয়সের বিয়েই এখন ফ্রান্সজুড়ে আলোচনার বিষয়। ব্রিজিতের পরিবার আমিয়েঁ শহরের প্রসিদ্ধ চকলেট প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ী। ব্রিজিতদের থ্রনিউ পরিবার ম্যাত্রেঁদ্ধার সঙ্গে ব্রিজিতের সম্পর্ক তখন মেনে নেয়নি, কিন্তু আজ তারা সুখী ও সফল দম্পতি। প্রথম পর্বের ভোটে জয়ের পর এক অনুষ্ঠানে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে স্মিতহাস্যে ম্যাত্রেঁদ্ধা বলেছিলেন, ‘ব্রিজিত সব সময় আমার পাশে আছে। তার চেয়ে বড় বিষয় তাকে ছাড়া আমি আজকের আমি হয়ে উঠতে পারতাম না।’

বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন : গোটা বিশ্ব থেকে নেতারা ফ্রান্সের নতুন নেতা ইমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইমানুয়েলকে টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধার বড় বিজয়ে তাঁকে অভিনন্দন। আমি তাঁর সঙ্গে কাজ করতে খুব আগ্রহী।’ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র বলেছেন, ‘ইমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধাকে অভিনন্দন। আপনার এ বিজয় শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ এবং ফ্রান্স-জার্মানির বন্ধুত্বের বিজয়।’ অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। তিনি নতুন নেতাকে মস্কো ও প্যারিসের মধ্যে সম্পর্কের গভীর ফারাক দূর করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। এক টেলিগ্রাম বার্তায় তিনি অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ইউরোপ ও পুরো বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে যখন কঠিন একসময়, তখন ফ্রান্সের জনগণ আপনার ওপর আস্থা রেখেছে। সন্ত্রাসের ক্রমবর্ধমান হুমকি ও এই পরিস্থিতিতে পারস্পরিক অনাস্থা কাটিয়ে ওঠা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নতুন এই প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ফ্রান্স আমাদের এক ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাই নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশাল পরিসরে কাজ করতে আমরা আগ্রহী। চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং বলেন, অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চীন ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

এছাড়াও জাপান, ইরান, কানাডা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রধানরা মাত্রেঁদ্ধাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জুঙ্কার, ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ফ্রান্স স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্বকে বেছে নিয়েছে। এএফপি, বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর