সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

অস্ত্র উদ্ধার না করে চার্জশিট অভিযুক্ত তিন

রাজধানীর ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী খুন

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী রিয়াদকে (১৬) যে অস্ত্রে গুলি করে খুন করা হয় তা উদ্ধার না করেই এক বছর পর চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তবে ওই চার্জশিটে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর ওই ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ঘরোয়া হোটেলের ম্যানেজার শফিক ছাড়াও অন্তত ১৬ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়াও যে মেসে রিয়াদকে গুলি করা হয়েছে সেখানকার সিসিটিভির জব্দ করা কিছু ভিডিও ফুটেজও প্রমাণ হিসেবে সংগ্রহ করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর তদন্তে নেমেই পুলিশ মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলটি সিলগালা করার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) আবেদন করেন। আদালতের আদেশে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর হোটেলটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে হোটেলটি। 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছরের অক্টোবরে ঘরোয়া হোটেলের মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল, কর্মচারী জসিমউদ্দিন চৌকিদার ও খবিরকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। জসিম আগেই গ্রেফতার ছিল। বাকিরা আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এখন তারা জেলহাজতে। আরিফুলের পিস্তলের গুলিতেই রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, আরিফুল ছিল ইয়াবাসেবী। মোবাইল চুরির অপরাধে কর্মচারীদের মেসে রিয়াদের বিরুদ্ধে শালিস বসান তিনি। এ সময় আরিফ তার কাছে থাকা পিস্তল তাক করে রিয়াদকে ভয় দেখাতে থাকে। এ সময় আরিফের হাত কাঁপছিল। এক পর্যায়ে অস্ত্র থেকে গুলি বের হলে মুখে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় রিয়াদের। ব্যবহারকৃত ওই পিস্তলটি বৈধ না অবৈধ সে বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আলীম হোসেন শিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আরিফের একটি লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। কিন্তু আমাদের পাওয়া তথ্যে যে অস্ত্রের গুলিতে রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে সেটি কোনো বৈধ বা লাইসেন্সধারী অস্ত্র ছিল না। আরিফ দীর্ঘদিন পলাতক থাকাবস্থায় নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেই হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেন। যে কারণে তাকে পরবর্তীতে রিমান্ডে আনা যায়নি। ফলে তাকে নিয়ে কোনো অভিযান পরিচালনা না করায় ওই অস্ত্রটি উদ্ধারও হয়নি। জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর মোবাইলফোন চুরির অভিযোগে রিয়াদকে (১৬) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পরদিনই রিয়াদের বড় ভাই রিপন ওয়ারী থানায় মামলা করেন। মামলার পরই ঘরোয়া হোটেল কর্মচারীদের স্বামীবাগের মেসটির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করে পুলিশ। রিয়াদের ভাই রিপনের অভিযোগ, তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার হারিয়ান সাহেববাড়ীতে। সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে তার ভাই তিন বছর ঘরোয়া হোটেলে চাকরি করেছিল। ঘটনার দিন বিকালে রিয়াদের খোঁজে মতিঝিলে ঘরোয়া হোটেলের দোতলার এক প্রান্তে রিয়াদকে হাত বাঁধা অবস্থায় দেখি। মোবাইল চুরির অভিযোগে তার হাত  বেঁধে রাখা হয়েছে বলে তাকে জানায় মালিক আরিফ ও অন্য কর্মচারীরা। পরে তিনি মোবাইলের দাম ১৫০০ টাকা পরিশোধ করতে চাইলে তাকে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে রিয়াদকে হোটেলের মালিক আরিফুলের পাজেরো গাড়িতে তুলে মতিঝিল থেকে ৭৩ নম্বর স্বামীবাগে কর্মচারী মেসে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই গাড়ির পিছু ধরে তিনিও স্বামীবাগে যান। তবে মেসের সামনে হোটেলের কর্মচারী জসিম তাকে চলে যেতে বললে তিনি ফিরে আসেন। হোটেলের আরেক কর্মচারী মাইনুদ্দিন রাত একটার দিকে তাকে ফোন করে রিয়াদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর দেন। আবার তিনি ওই মেসে গিয়ে শোনেন— গুলিবিদ্ধ রিয়াদকে আরিফসহ চারজন পাজেরো গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছেন। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে গিয়ে রিয়াদের লাশ শনাক্ত করেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন রাত দেড়টার দিকে জসিমউদ্দিন চৌকিদার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রিয়াদকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জসিম জানিয়েছিল- রিয়াদ হোটেলের টাকা নিয়ে সিএনজিতে করে শান্তিনগরে মালিকের বাসায় যাওয়ার পথে শাপলা চত্বর এলাকায় ছিনতাইকারীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে রিয়াদের মুখে গুলি লাগে। তবে টাকা খোয়া যায়নি। রিয়াদকে ভর্তি করার পরই লাপাত্তা হয়ে যায় জসিম। জানা গেছে, জসিমের দেওয়া তথ্যের কারণে মামলা নেওয়া নিয়ে চলে মতিঝিল ও ওয়ারী থানার মধ্যে ঠেলাঠেলি। গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ছিল স্বামীবাগে। কিন্তু হাসপাতালে জসিম বলেছিল রিয়াদ শাপলা চত্বরে গুলিবিদ্ধ হয়। আর ঘটনার পরই মেসের লোকজন ওয়ারী থানার এসআই খালেককে জানিয়ে রেখেছিল। ফলে ওয়ারী থানাতেই মামলা নেওয়া হয়। এরপরই গ্রেফতার করা হয় জসিমকে।

সর্বশেষ খবর