শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

শুরুতেই হোঁচট খেল এরশাদের জোট

মাহমুদ আজহার

শুরুতেই হোঁচট খেল এরশাদের জোট

শুরুতেই হোঁচট খেল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন ৫৬-দলীয় জাতীয় জোট (ইউএনএ)। ‘নামসর্বস্ব’ ২১-দলীয় জোট বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) ভাঙনের মুখে পড়েছে। এর মধ্যে ১১টি দল বেরিয়ে পৃথক জোট গঠন করেছে। গতকাল রাতেও পরবর্তী করণীয় নিয়ে রাজধানীর কুড়িলে জোটের নেতারা বৈঠক করেন। এরশাদের জোটে কীভাবে থাকা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন। একইভাবে ২১ দলের নেতৃত্বে থাকা সেকেন্দার আলী মনিকে বাইরে রাখার চিন্তাভাবনাও করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ২১-দলীয় বিএনএ-ই নয়, এরশাদের নেতৃত্বাধীন ৫৬টি দলের দু-একটি বাদে সবগুলোই নামসর্বস্ব। ৫৪টি দলেরই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। দুটি নিবন্ধিত দল ও দুটি মোর্চা নিয়েই মূলত সম্মিলিত জাতীয় জোট গঠিত হয়েছে।  জানা যায়, সেকেন্দার আলী মনির নেতৃত্বেই চলছিল ২১ দলীয় জোট। সেখানে মূলত নামসর্বস্ব দল ১৪টি। এর মধ্যে তিনটির নেতৃত্বে সেকেন্দার আলী। বাকিগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণজাগরণ পার্টির চেয়ারম্যান সেলিম হায়দার, আমজনতা পার্টির  চেয়ারম্যান  বেনজির আহমদ, গণঅধিকার পার্টির চেয়ারম্যান হোসেন মোল্লাসহ কয়েকজন নেতা। ১১ দলীয় জোটের নেতাদের অভিযোগ, সেকেন্দার আলীর স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারণেই তারা পৃথক জোট করছেন। এই জোটই এরশাদের সঙ্গে থাকবে। নেতৃত্ব দেবেন ১১ দলের নেতারাই। ১১ দলীয় জোটের নেতারা এরশাদের সঙ্গে শিগগিরই দেখা করবেন। সেকেন্দার আলীর স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে। গত ৭  মে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং জাতীয় ইসলামী মহাজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) সমন্বয়ে ইউএনএ নামে দেশের বৃহত্তম  জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন এইচ এম এরশাদ। এতে সর্বমোট দল ৫৬টি। জানা যায়, ২১-দলীয় জোট বিএনএর নেতৃত্বে থাকা সেকেন্দার আলী মনির সঙ্গে জোটের কয়েকজন নেতার বেশ কিছুদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল। আর্থিক লেনদেন ও নতুন জোটে স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টিও প্রকাশ্যে আসে। এসব কারণের ধারাবাহিকতায় বুধবার ১১টি দল বেরিয়ে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। তারা এরশাদের সঙ্গে পৃথক দেখা করে জোটে থাকার চেষ্টা করবেন। কোনো কারণে এরশাদ তাদের গ্রহণ না করলে তারা পৃথক জোটেই থাকবেন বলে জানা গেছে। বের হওয়া দলগুলো হলো—গণজাগরণ পার্টি, জাতীয় তফসিল ফেডারেশন, আমজনতা পার্টি, আওয়ামী পার্টি, গণঅধিকার পার্টি, ইসলামী গণতান্ত্রিক লীগ, প্রতিবাদী জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, তৃণমূল লীগ, সচেতন হিন্দু পার্টি ও বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জোটের মুখপাত্র এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোটের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছে। কিন্তু সবার সম্মিলিত জাতীয় জোটের প্রতি আস্থা রয়েছে। তারা সবাই একযোগে জোটে কাজ করতে চান। তাদের নিজেদের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা সমন্বয় করা হবে।

 তিনি বলেন, সম্মিলিত জাতীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটি বিভাগ, জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা কমিটি গঠন করা হবে। দেশবাসীকে ঐক্য করাই আমাদের জোটের প্রচেষ্টা। রমজানকে সামনে রেখে একযোগে সহমতে থেকে কাজ করা আমাদের লক্ষ্য।’

সেকেন্দার আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে গণঅধিকার পার্টির সভাপতি ও নতুন বিএনএ-এর মুখপাত্র হোসেন মোল্লা জানান, জোট গঠনের দিন পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, জোট গঠনের পর বিএনএ-এর মিটিং আহ্বান করার কথা বললে সেকেন্দার আলী তাতে সাড়া দিচ্ছেন না। বিএনএতে আসলে দল ছিল ১৪টি। তাদের সঙ্গে আছে ১১টি দল। বাকি তিনটি দল আছে সেকেন্দারের সঙ্গে। তিনি জানান, এইচ এম এরশাদ যত দিন তাদের রাখবেন তত দিন তারা সম্মিলিত জোটে থাকবেন।

বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) সেকেন্দার আলী মনি বলেন, ‘দুটি দল প্রথম থেকে ডিস্টার্ব করে আসছে। প্রায় প্রতিদিন পারিবারিক সমস্যার কথা বলে টাকার জন্য বসে থাকে। তিনি বলেন, যারা সমস্যা করছে তাদের বিএনএ জোট থেকে বের করে দেওয়া হবে। জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আমাদের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করছেন, তাদের স্থান পূরণ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর