শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে বাদ তিন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে বাদ তিন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আবদুস সুবহান ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ। একই অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সুবহানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন তিনি। এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এই তিন নেতা এখন দলের প্রাথমিক সদস্য। চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত মজলিশে শূরার এক সদস্য নিশ্চিত করেন, সাঈদী, আবদুস সুবহান ও এ টি এম আজহার আর জামায়াতের দায়িত্বশীল পদে নেই। তবে তাদের কবে বাদ দেওয়া হয়েছে তার দিনক্ষণ বলতে না পারলেও তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির শেষ কিংবা মার্চের প্রথম দিকে তাদের দলের শীর্ষ পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত ১৫ ও ১৬ মে-সহ সাম্প্রতিক সময়ে সাঈদীর মুক্তি চেয়ে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদের গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিটি বিবৃতিতে দেখা গেছে সাঈদীর নামের আগে জামায়াতের শীর্ষ নেতা বলা হয়েছে কোনো পদবি উল্লেখ করা হয়নি। জানা যায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারে দুর্বল হয়ে পড়া জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। জানা যায়, দণ্ডিত নেতারা আর ফিরবেন না, তা ধরে নিয়ে তিন নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের বাদ দেওয়া হলে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নেওয়া হয়—এ যুক্তিতেই তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ সাত বছর পর গত বছরের অক্টোবরে নির্বাচিত হয় জামায়াতের নতুন নেতৃত্ব। ২০১০ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করা মকবুল আহমাদ দলীয় রুকনদের ভোটে আমির নির্বাচিত হন। আমির নির্বাচিত হয়ে গত নভেম্বরে সেক্রেটারি জেনারেল পদে ডা. শফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেন মকবুল আহমাদ। একই সময় নায়েবে আমির পদে নিয়োগ পান আবদুস সুবহান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুজিবুর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ার, আতাউর রহমান এবং আ ন ম শামসুল ইসলাম। ছয় নায়েবে আমিরের মধ্যে প্রথম তিনজন আগের কমিটিতে একই পদে ছিলেন। ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ভবিষ্যৎ রাজনীতির কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাঈদী সাহেব দলের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। একজন ভালো বক্তা হিসেবেও সারা দেশে তিনি সুপরিচিত। দেশব্যাপী তার অনেক ভক্ত আছে। কিন্তু এর পরও বলব, তিনি যেহেতু চূড়ান্তভাবে অভিযুক্ত হয়ে গেছেন, এখন তো তিনি নিজেও ইচ্ছে করলে আর দলের জন্য কিছু করতে পারবেন না।

তাই তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া ছাড়া এ মুহূর্তে বিকল্প নেই। এদিকে জামায়াতের তরুণ নেতৃত্বের একটি অংশ মনে করেছিল, দলের নেতা হিসেবে হয়তো সাঈদী কোনো অপরাধ করেননি। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তাকে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাই এটা নিয়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হওয়া দরকার। কারণ কোনো দলের মধ্যে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কেন্দ্রীয় দায়িত্বে থাকতে পারেন না।

সর্বশেষ খবর