শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

এবার প্রেমের টানে থাই তরুণী বাংলাদেশে

নওগাঁ প্রতিনিধি

এবার প্রেমের টানে থাই তরুণী বাংলাদেশে

ভালোবাসা মানে না কোনো বাধা। তাই তো সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন সুদূর থাইল্যান্ড থেকে সুপুত্তো ওরফে ওম (৩৬) (বর্তমানে সুফিয়া খাতুন)। ভালোবেসে বিয়ে করলেন বাংলাদেশের মুঠোফোন মেরামতকারী অনীক খান (২২) নামের যুবককে।

গত বুধবার বিকালে নাটোর আদালত চত্বরে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। থাই কন্যা ও বাংলাদেশি যুবকের বিয়ে দেখতে এ সময় আদালত চত্বরে ভিড় করে উত্সুক জনতা। অনীক খানের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আমজাদ খানের ছেলে। গত রাত ১টা ১৫ মিনিটে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে সুপুত্তো ওরফে ওম ওরফে সুফিয়া খাতুন জানান, বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেও অনীক খানের জন্য তার হৃদয় এই দেশে পড়ে থাকবে। এরও আগে বুধবার বিকালে আদালত চত্বরে হাসিমুখে ইংরেজিতে ওম বলছিলেন, ‘আমাদের সমাজে বহুবিবাহ একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এটা পছন্দ করি না। তাই বিয়ে করছিলাম না। হঠাৎ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের অনীকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওর সরলতা আমাকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আমার আস্থা জন্মেছে। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে শুধু আমার করে নেওয়ার জন্য বার বার এ দেশে ছুটে এসেছি। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি এখন দারুণ সুখী।’ ওম জানান, তার বাড়ি থাইল্যান্ডের চো-অম জেলার পিচচোবরি এলাকায়। বাবা উইসাই ও মা নট্টাফ্রন। দুজনই আলাদা থাকেন ভিন্ন ভিন্ন দেশে। ওম পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে ব্যাংকে চাকরি করতেন। বর্তমানে ফাস্টফুডের ব্যবসা করেন। বন্ধুবান্ধবরা সবাই বিয়ে করেছেন। তারা বহুবিবাহে আসক্ত হয়েছেন। এটা তার ভালো লাগছিল না। তিনি বিয়ে করেন না। বয়স ৩৬ ছুঁইছুঁই। দোকানে বসে ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বাংলাদেশের ২২ বছরের তরুণ অনীক খানকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠান। অনীক প্রস্তাব সমর্থন করলে তাদের মধ্যে চেনাজানা শুরু হয়। ফোনে কথাবার্তাও চলতে থাকে। তারা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেন। ওম আরও জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে বন্ধুর টানে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। বিমানবন্দরে অনীককে দেখে আরও ভালো লাগে। অনীকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তিনি বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু অনীকের পরিবার তাতে সাড়া দেয় না। মাত্র পাঁচ দিনের ভিসা নিয়ে আসায় তড়িঘড়ি করে পুনরায় দেশে ফিরে যান। বলে যান, ছয় মাস পর আবার আসবেন। কিন্তু ছয় মাস অপেক্ষা করতে পারেননি। চলতি মাসের প্রথম দিকে তিনি আবারও অনীকের কাছে ছুটে এসেছেন। বিয়ে করার জন্য অনীকের পরিবারের সদস্যদের হাতে-পায়ে ধরেছেন। দিনের পর দিন কান্নাকাটি করেছেন। না খেয়ে অনশন পর্যন্ত করেছেন। অবশেষে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে বুধবার তারা ধর্মীয় ও হলফনামামূলে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তার নাম এখন সুফিয়া খাতুন।

অনীক খান জানান, তার বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়। পড়ালেখা তেমন একটা করেননি। তবে ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারেন। সেখানে তার একটা মুঠোফোন মেরামতের দোকান রয়েছে। দোকানে বসে অলস সময় কাটাতে গিয়ে ফেসবুকে ওমের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা ভিডিও কল করে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। এভাবেই তারা পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছেন। তারা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না। ধর্ম ও রাষ্ট্রের আইন-কানুন মেনে তারা সুখের সংসার গড়তে চান। অনীক বলেন, ‘সুফিয়া আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি ওর সঙ্গে সারা জীবন থাকতে চাই।’

সর্বশেষ খবর