শনিবার, ২০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাড়ছেই নিত্যপণ্যের দাম টার্গেট রমজান

বাজার দর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়ছেই নিত্যপণ্যের দাম টার্গেট রমজান

নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজানকে টার্গেট করে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে বাড়িয়েছেন ছোলার দাম। গতকাল খোলাবাজারে এক কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। পাশাপাশি বাড়তে শুরু করেছে মাছ, মাংস, ডাল, চিনি ও সবজির দাম। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ধাপে ধাপে দাম বাড়ানো হয়েছে সবজির।

আর কয়েক দিন পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসকে সামনে রেখে রোজাদারদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ছোলার দাম বাড়ানো ছাড়াও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চিনির দামও বাড়ানো হয়েছে। এখন প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এ ছাড়া ডালের মধ্যে সাদা মটর ৬০ টাকা এবং মসুর ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে সামুদ্রিক মাছের বাজারও বেশ গরম। বিক্রেতারা দাবি করছেন, সরবরাহ কম থাকার কারণে বাজারে চড়া দামে সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এসব মাছের দাম। তারা এও বলছেন, টানা বর্ষণের ফলে মাছের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। প্রসঙ্গত, খুচরা বাজারের মূল্য তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা হাতালেও সরকার বা ব্যবসায়ী সংগঠনের কোনো নজরই নেই। গতকাল নগরীর মিরপুর ও বারিধারা বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বরবটি প্রতি কেজি ৮০, তিত করলা ৫০, ঢেঁড়স ৪০, কচুর লতি ৪৫, ঝিঙা ৪০, চিচিঙ্গা ৩০, কাঁকরোল ৫০, পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বেগুন ৪০, গাজর ৫০, শসা ৩০, টমেটো ৩০, আলু ২০, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিরপুর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা জামান মিয়া বলেন, ‘সবজির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বাড়তি দামেই সবজি বিক্রি হচ্ছে।’ এ বাজারে মিঠা পানির মাছের তুলনায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। কোরাল মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০০ থেকে ৭০০, সুরমা ৩২০, রূপচাঁদা জাত ও আকার ভেদে ৪৫০ থেকে ৭৫০, পোয়া মাছ ২২০ থেকে ৩০০, ইলিশ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০, রুই ১৮০ থেকে ২২০, কাতলা ২০০ থেকে ২৫০, সিলভার কার্প ১৬০, দেশি শিং ৫০০, শোল ৪০০, মাগুর ৫০০, বোয়াল (বড়) ৩০০, পাঙ্গাশ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারের মাছ বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ কম। তাই বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে মিঠা পানির মাছ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা গৃহিণী নাফিজা আলী বলেন, বাজারে সব কিছুর দামই বেশি। সবজির দাম আরও বেশি। মাছের দাম অনেক বেশি। এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০, দেশি মুরগি ৩৫০, গরুর মাংস হাড়সহ ৫০০ থেকে ৫২০, হাড়ছাড়া ৬০০, খাসির মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ।

ছোলার কেজি ৯০ টাকা :  রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০ টাকায়। এ দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছর রমজানে এ পণ্যটি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ৮০ টাকায়। দেশের শীর্ষ ছোলা আমদানিকারক আবুল বশর জানান, দেশে এবারের রমজানে ছোলার চাহিদা ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন। রমজান ও তার আগের মাসে ছোলা লাগে প্রায় ৭০ হাজার টন। ৯৯ ভাগ ছোলার চাহিদাই পূরণ করতে হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। মাত্র ৫-৬ হাজার টন ছোলা আসে মিয়ানমার থেকে।

চট্টগ্রামে ঊর্ধ্বমুখী মাছ-মাংসের দাম : এদিকে চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রামে সবজির বাজার কোনোরকম স্থিতিশীল থাকলেও ঊর্ধ্বমুখী মাছ ও গরুর মাংসের দাম। মাছ-মাংসের বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তা ছাড়া কোথাও মাছ-মাংসের মান নিয়ে গোঁজামিলের অভিযোগ রয়েছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকার পরিবর্তে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। আর ৬০০ টাকা নিলে সেখানে কৌশলে মাংসের ভিতরে হাড়, চর্বি ও রগ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে মাছের ক্ষেত্রে পচা মাছই বিক্রি করা হচ্ছে। ভালো মাছের অতিরিক্ত দাম হাঁকা হয়। জানা যায়, গত মঙ্গল ও বুধবার নগরের অন্যতম প্রধান বাজার রেয়াজুদ্দিন বাজার ও কাজীর দেউড়ি বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ আলী। তিনি বলেন, ‘অভিযানে সব বিক্রেতাকে সতর্ক করা এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ অতিরিক্ত মূল্য নিলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’ গতকাল বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও তা ছিল ২০০-২৫০ টাকা। ১২০ টাকার তেলাপিয়া ১৫০, ১০০ টাকার পাঙ্গাশ ১৫০, লইট্টা ১০০ থেকে ১৫০ (মানভেদে), ছোট লাল চিংড়ি ২০০, পোঁপা ২৫০, সিলভার কার্প ২২০, কার্প ২৩০ টাকা। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে বড় লাক্ষা (কাটা) কেজি ১২০০, কোরাল ৮৫০, সাদা রূপচাঁদা ৫৫০-৮০০, কালো রূপচাঁদা ৪৫০-৬০০, ইলিশ ৮০০-১২০০, গলদা চিংড়ি (ছোট) ৭০০ টাকা। বক্সির হাট বাজারের মাছ বিক্রেতা কলিম উদ্দিন বলেন, ‘রমজান সামনে রেখে আড়তদাররা মাছের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ এদিকে গতকাল বাজারে প্রতি কেজি বাঁধাকপি, কাঁকরোল, টমেটো ৩০; আলু ১৮, দেশি আলু ৩৫; বেগুন, পেঁপে, চিচিঙ্গা ৫০; পাকা মিষ্টিকুমড়া ২৫, কাঁচা ৪০; ফুলকপি ১০০; বরবটি, ঢেঁড়স, লাউ, পটোল, কচুর লতি, ঝিঙে ৪০; শিম ৯০; মুলা ৬০; চালকুমড়া ৪০; শসা (বড়) ৪০; কাঁচামরিচ ৩০-৪০; ধনেপাতা ১৫০; পাতা ধন্যা ১৪০; খিরা ২০; গাজর ৭০; ক্যাপসিকাম ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সবজি বিক্রেতা সুরুজ মিয়া বলেন, বাজারে এখন মোটামুটি নানা ধরনের সবজির সরবরাহ ভালোই আছে। তাই বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল আছে।

 

সর্বশেষ খবর