শনিবার, ২০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাবনায় ভূমিমন্ত্রীর ছেলে কারাগারে

পাবনা প্রতিনিধি

ঈশ্বরদী শহরে বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর এক মামলায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের ছেলে শিহান শরীফ তমালসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের গতকাল ভোরে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করে।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাই তালুকদার জানান, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের বিশ্বাসের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার বিশ্বাস সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে ঈশ্বরদী থানায় মামলা করেন। মামলায় ভূমিমন্ত্রীর ছেলে তমালকে প্রধান আসামি করে আরও ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ঈশ্বরদী ও পাবনা পুলিশের একটি যৌথ টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তমালসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ঈশ্বরদী পৌর এলাকার শেরশাহ রোডের আশরাফ হোসেনের ছেলে মাহবুব হাসান (২৬), মধ্য অরণকোলার হাসান আহমেদের ছেলে মামুন হোসেন (৩২), ইস্তা মহল্লাহর নুরুল হকের ছেলে শামসুদ্দিন (৩২), শেরশাহ রোডের আশরাফ হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান (২৬), একই মহল্লার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে সবিরুল ইসলাম (৪২), আশরাফ হোসেনের ছেলে প্রিন্স ইসলাম (২৭), ইউসুফ আলীর ছেলে জাফর ইকবাল (৪০), মৃত আছির উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), পূর্ব টেংরীর আবদুর রহিমের ছেলে রনি (২৬), আমিনপাড়ার সালমান শাহীনের ছেলে শাহাদত আদনান রূপক (২৬)। স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাবনা-৪ আসনের এমপি ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের ছেলে তমালের সঙ্গে তার ভগ্নিপতি পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদের অনেক দিন ধরেই বিরোধ। এরই জেরে বৃহস্পতিবার বিকালে তমালপন্থি যুবলীগ নেতা রাজীব সরকারের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ সন্ত্রাসী ঈশ্বরদী পৌর সদরে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এ সময় মন্ত্রীর জামাতা আজাদের মিষ্টির দোকান, বেশকিছু সাধারণ ব্যবসায়ীর দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। আজাদের সমর্থক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের বিশ্বাসের বাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। বাধা দিতে গেলে তাদের মারধরে ছাত্রলীগ সভাপতির মা আহত হন। তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ‘এদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অস্থির হলেও আমরা মুখ খোলার সাহস পাই না। মুখ খুললেই শুরু হয় নির্যাতন।’ কয়েক দিন আগে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে এক ঠিকাদারের কাছে তারা চাঁদা চায়, দিতে অস্বীকার করলে তমালের লোকজন ওই ঠিকাদারের ড্রেজার ও মেশিনপত্র ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে সমঝোতার মাধ্যমে তারা কাজ করতে বাধ্য হয়। তমাল বাহিনীর লোকজন পেশিশক্তির জোরে শহরে অনেকের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এমনকি সরকারি জায়গা টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হঠাৎপাড়া নামের একটি আবাসিক এলাকা গঠন করে বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বরাদ্দপত্র দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই ঈশ্বরদী উপজেলার শতাধিক স্পটে মাদক বিক্রি চলে। আর এসব অপকর্মে সাহায্য দিয়ে চলেছেন পুলিশের কতিপয় বাঘা কর্তা। ঈশ্বরদী পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে দলীয় নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিলেন। দিনের বেলায় তারা শহরে কালো কাপড়ে মুখ বেঁধে এসব অপকর্ম করে বেড়ালেও কেউ প্রতিবাদের সাহস করেনি। তারা আওয়ামী লীগের অর্জন নষ্ট করতে চায়। এরা দলের কেউ নয়। এই সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই চায় ঈশ্বরদীবাসী।’ এদিকে উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ও এই মামলার অন্যতম আসামি রাজীব সরকার বলেন, ‘মেয়র আজাদ ঈশ্বরদীর রাজনীতি নষ্ট করার জন্য এই গ্রুপিং করছেন। নিজস্বার্থ হাসিলের জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর