রবিবার, ২১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাংকে পড়ে আছে পৌনে তিন লাখ কোটি অলস টাকা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ব্যাংকে পড়ে আছে পৌনে তিন লাখ কোটি অলস টাকা

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এই টাকা বিনিয়োগযোগ্য কিন্তু বিনিয়োগ হয়নি, অব্যহূত রয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশি তিনটি কোম্পানির বিদেশে বিনিয়োগ অনুমতির বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে অতিরিক্ত এই তারল্যের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, ‘বর্তমানে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যথেষ্ট উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে— যার পরিমাণ ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা, যা অব্যবহূত অবস্থায় রয়েছে। জিডিপির সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ন্যূনতম স্থানীয় বিনিয়োগ ৩২ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। এ পর্যায়ে স্থানীয় বিনিয়োগকে উৎসাহিত না করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করা যথাযথ হবে কি-না তা সতর্ক বিবেচনার দাবি রাখে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আলী আকবর ফরাজী গত মার্চে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠান অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তিনি ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগযোগ্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থের যে হিসাব দেন তা গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ওপর তৈরি করা। জানা গেছে, এর আগের বছর একই সময়ে অর্থাৎ ২০১৫ সালের নভেম্বরে ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগযোগ্য তারল্যের পরিমাণ ছিল প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়ার কারণেই ব্যাংকে অলস টাকার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়নের যে প্রতিবেদন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের নেতিবাচক তথ্য রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, আর বাস্তবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। বেসরকারি খাতের এই ঋণ প্রবাহ দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের চিত্র সম্পর্কে ধারণা দেয়। অবশ্য বিনিয়োগযোগ্য এই তারল্যের পুরোটাই যে অলস পড়ে আছে তা বলতে নারাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এসব অর্থের কিছু অংশ বিধিবদ্ধ জমা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রেখেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কিছু অংশ স্বল্প সুদে বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে ভল্টে রেখেছে। কারণ অতিরিক্ত তারল্য বাজারে থাকলে সেগুলো বিভিন্নভাবে পাচার হয়ে যেতে পারে, অথবা অনুৎপাদনশীল খাতে গিয়ে দেশের মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক চিফ ইকোনমিস্ট ও বিআইডিএস-এর সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অব্যবহূত তারল্যের কথা বলেছে, এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগযোগ্য অর্থ। বিনিয়োগের পর যেটা আর ব্যবহার করতে না পারে সেটা তারা বন্ড-টন্ড কিনে রাখে স্বল্প সুদের বিনিময়ে। আমাদের দেশে যদি বিনিয়োগের সুযোগ থাকত, তবে এই অর্থ নিষ্ক্রিয় পড়ে না থেকে আরও বেশি উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করতে পারত।

সর্বশেষ খবর