বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে

জানুয়ারি থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রেমিট্যান্স, রপ্তানি আর মূল্যস্ফীতি এই তিন সূচকের নেতিবাচক প্রবণতায় দেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় মন্দা অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স আয়ে। লক্ষ্য অনুযায়ী রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে না। আবার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। হাওরে অকালবন্যায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। ফলে গত জানুয়ারি থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। চাল, লবণ, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-যাপনে ব্যয় বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক চিফ ইকোনমিস্ট এম কে মুজেরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে সেই প্রবণতা বেশ কয়েক মাস ধরেই স্পষ্ট হচ্ছিল। রেমিট্যান্স আয় গত অর্থবছর থেকেই নিম্নমুখী। সাম্প্রতিক তথ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কম ও মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। হাওরের বন্যায় কৃষি খাতেও উৎপাদন কিছুটা কমবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক এই মহাপরিচালক আরও বলেন, অর্থনীতির এই সূচকগুলোর নেতিবাচক প্রবণতা অর্থনীতিতে দুর্যোগ বয়ে আনছে তা নয়, তবে এই প্রবণতা সামনের দিনগুলোয় অব্যাহত থাকলে তা সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে। অর্থনীতিতে চাপ বাড়ার প্রবণতা বিশ্বব্যাংকের গবেষণায়ও দেখা গেছে। এ মাসের মাঝামাঝি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’-এ বলা হয়েছে, মূলত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমায় এবং রেমিট্যান্সের পতনের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কম হবে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) যেখানে বাংলাদেশ রপ্তানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল, এবার একই সময়ে সেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ। আর ওই সময়ে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স কমেছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ; এবার কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। শুধু যে রপ্তানি, রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব তাই নয়, আগের বছরের তুলনায় কম হলেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক তথ্যে দেখা যায়, এ বছর জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মার্চে গিয়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশে। আগের বছরের প্রথম তিন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ০৭, ৫ দশমিক ৬২ ও ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির এই প্রবণতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। কারণ, অকালবন্যায় হাওরাঞ্চলের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রকাশ করতে গিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, চালের দাম বাড়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। হাওরাঞ্চলে বন্যার কারণে ধানের ফলনের ক্ষতি হওয়ায় চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। ফলে চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৭৯ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে প্রায় ১৩৮ কোটি ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর