বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে রেইনট্রির এমডি

আপন মালিকের গাড়ি জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বনানীর রেইন ট্রি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বি এ এইচ আদনান হারুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা। গতকাল বেলা ১১টার পর তিনি অধিদফতরের কার্যালয়ে এলে বেলা ২টা পর্যন্ত তার জিজ্ঞাসাবাদ চলে। অন্যদিকে সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকা থেকে আপন জুয়েলার্সের দেড় কোটি টাকা দামের গাড়ি জব্দ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এ ছাড়া তদন্তকালীন এবং তদন্ত প্রতিবেদনে শাস্তির সুপারিশ করার পরও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বি এম ফরমান আলীর স্বপদে বহাল থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা। এদিকে রেইন ট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষকে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শুল্ক আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে অভিযোগের অনুসন্ধান এবং তদন্তের শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান আদনান হারুন। এ সময় সঙ্গে তার চাচা ও মামা ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আদনান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি শুল্ক গোয়েন্দাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, তার কাছ থেকে পাওয়া জবাবে তারা সন্তুষ্ট। তবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি আদনান। তাকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় আদনান স্বীকার করেন, শুল্ক গোয়েন্দারা যেসব বোতল উদ্ধার করেছেন তা জুসের নয়, মদ। তাদের মদ বিক্রির কোনো লাইসেন্স নেই বলেও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন আদনান। মইনুল খান বলেন, গত তিন মাসে আদনান ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। জমা দিয়েছেন মাত্র ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাটের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হবে। রেইন ট্রির বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি ও মদের লাইসেন্স না থাকার পরও মদ বিক্রির জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হবে। এদিকে গতকাল সিলেটের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ ও তার ছেলে শাফাত আহমেদের একটি বিলাসবহুল গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩১-৮৮৫৬) জব্দ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। রেমার্সিডিজ ব্র্যান্ডের গাড়িটির মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। সিম্ফনি হাইট নামে ওই বাসার মালিক সাফাতের মামা খলিলুর রহমান মাসুম। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গাড়িটি চৌকিদেখি এলাকায় শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। দিলদারের পৈতৃক বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির নগর গ্রামে। যোগাযোগ করলে সিলেট শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার প্রভাত কুমার সিংহ বলেন, গাড়িটি শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়েছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, গাড়িটিতে যে কাগজপত্র পাওয়া গেছে, সেখানে মালিক হিসেবে রয়েছে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের নাম। তবে গাড়িটি ব্যবহার করত তার ছেলে শাফাত আহমেদ। কাগজে দেখা যায়, গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে ২০১১ সালের তৈরি উল্লেখ করা হলেও পিন কোড দেখে জানা যায়, গাড়িটি ২০০২ সালে তৈরি। যদিও বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ি আমদানি করা নিষেধ। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিল অব এন্ট্রি নম্বর ৬৭৪৬৮, তারিখ ২৫.০৫.২০১১ এর মাধ্যমে খালাসকৃত সাতটি গাড়িতে মোট ৯৩.৫ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। আটক গাড়িতে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে অভিযোগে ১৪ মে শুল্ক গোয়েন্দারা ওই হোটেলে অভিযান চালান। অভিযানে রেইন ট্রি হোটেলের ১০১ নম্বর কক্ষে ১০ বোতল মদ পাওয়া যায়। প্রথমে হোটেল কর্তৃপক্ষ আটক মাদককে জুস হিসেবে বর্ণনা করে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে হোটেল থেকে মদ উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করে তারা। এসব নিয়ে শুনানির জন্য শুল্ক গোয়েন্দারা হোটেল রেইন ট্রি কর্তৃপক্ষকে ১৭ মে তলব করেন। তখন অসুস্থতার কথা বলে সময় প্রার্থনা করে রেইন ট্রির মালিকপক্ষ। হোটেল মালিককে ছয় দিনের সময় দিয়ে ২৩ মে সশরীর হাজির হতে পুনরায় নোটিস দেওয়া হয়। রেইন ট্রি কর্তৃপক্ষ নোটিস চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করে। রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট নোটিসের কার্যকারিতায় স্থগিতাদেশ দেন। এর পরপরই রাষ্ট্রপক্ষ ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে। সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে একই দিন বিকালে শুনানি শেষে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশটি স্থগিত করে আপিল বিভাগ। এর ফলে গতকাল রেইন ট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষকে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়।

সর্বশেষ খবর