বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
তৃতীয় বাণিজ্যিক নগরী হবে যশোর

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো তবে সমস্যাও আছে

——— গোলাম ফারুক লিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো তবে সমস্যাও আছে

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে ব্যবসাবান্ধব থাকলেও যশোরের ব্যবসায়ীদের এখনো অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সরকার যশোর  থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করলেও এ অঞ্চলের উন্নয়নে, এখানকার ব্যবসায়ীদের সুবিধায় তেমন কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। যশোর থেকে আয় হওয়া রাজস্বের কিছু অংশ যদি যশোরের উন্নয়নে খরচ করা হতো, তবে এ জেলার চেহারাই অন্য রকম হয়ে যেত। এমনই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মোটর পার্টস টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতির যশোর সার্কেলের সভাপতি গোলাম ফারুক লিটন। তিনি বলেন, কেবল বেনাপোল স্থলবন্দর থেকেই সরকার বছরে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় করে থাকে। অথচ পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলে কলকাতা থেকে ট্রাকে পণ্য লোড করে পেট্রাপোলে এলে ১২ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সিরিয়ালে থাকতে হয়। আর এর জন্য প্রতিদিন দুই হাজার টাকা করে ডেমারেজ দিতে হয়। বাংলাদেশের কাস্টমসের জটিলতার কারণেই ব্যবসায়ীরা এই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কাস্টমসে জনবল কম। ভেরিফিকেশনে সময় নিচ্ছে বেশি। তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানিপণ্য নিয়ে প্রতিদিন চার-পাঁচশ ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অথচ তিন মাস হয়ে গেল যশোর-মাগুরা সড়কের সীমাখালী ব্রিজটি ভেঙে পড়ে আছে। সব ধরনের যানবাহন যশোর থেকে ঝিনাইদহ ঘুরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। লিটন বলেন, চট্টগ্রাম, মংলা বন্দরের আয়ের একটা অংশ সেখানকার উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। বেনাপোল বন্দরের আয় থেকেও যদি কিছু অংশ যশোরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় করা হতো, তাহলে যশোরের এসব সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যেত। তিনি বলেন, মোটর পার্টস ব্যবসায় যশোর অভাবনীয় অগ্রগতি লাভ করেছে। শহরের প্রায় এক হাজার পার্টস ব্যবসায়ী বছরে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করছেন। এখান থেকে দুইশ’ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে মোটরসাইকেল পার্টসের ক্ষেত্রে যশোর বিকল্পহীন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সারা দেশে যত মোটরসাইকেল পার্টসের প্রয়োজন হয়, এর শতভাগই যশোর থেকে যায়। এমনকি যেসব পার্টস এখন আর কোথাও পাওয়া যায় না, তার ছবি দেখেই এখানকার মেকানিকরা তা তৈরি করে দিতে পারেন। এখানে ধোলাইখালের মতো কুটিরশিল্পের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যশোরের এ শিল্পকে অনেক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। মোটর পার্টস ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাটের যে নিয়ম করা হচ্ছে, তাতে তৃণমূল ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন সিস্টেমে ভ্যাট দেওয়ার জন্য কম্পিউটার কিনতে হবে, একজন অপারেটর নিয়োগ দিতে হবে। এসব করে তাদের পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। যারা করপোরেট বিজনেস করেন, তাদের জন্য এটা কোনো সমস্যা না। কিন্তু এই সিস্টেমে আমরা কাস্টমসের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমি নিজেও ভীতির মধ্যে রয়েছি। এটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, এর বিকল্প হিসেবে সরকার প্যাকেজ ভ্যাটই একটু বাড়িয়ে নিতে পারে। কিংবা আমদানিপণ্যের উৎসমুখ থেকেও এই ভ্যাট কেটে নিতে পারে। তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই জটিল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাবেন। লিটন বলেন, আমরা ট্যাক্স দিই, ভ্যাট দিই, কিন্তু আমরা আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা পাই না। রাতে চুরি হয়ে যায়। আমরা নিজেরা কিছু উৎপাদন করব, তাতে কোনো সহযোগিতা পাই না। ব্যাংকে উচ্চ হারে সুদ। ভ্যাট, ট্যাক্স আদায় করার জন্য কাস্টমসের লোকেরা গেটে বসে থাকেন। ভ্যাট, ট্যাক্স আমরাও দিতে চাই। কিন্তু সেটা সহনশীল হতে হবে। আমি মাসে এক লাখ টাকা দিতে পারি। কিন্তু কাস্টমসের লোকেরা আইনের মারপ্যাঁচ কষে আমাকে ৫০ লাখ টাকা দিতে বলবে। এ রকম পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ না পেলে ব্যবসায় পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। যশোরে একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের ব্যাপারে এই ব্যবসায়ী নেতাও গুরুত্ব  আরোপ করে বলেন, মংলা ও চিটাগাং বন্দর থেকে নৌপথে পণ্য যশোরে এনে রিলিজ করতে পারলে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে।

সর্বশেষ খবর