বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

নজরুলজয়ন্তী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নজরুলজয়ন্তী আজ

আজীবন তিনি সাম্যের গান গেয়েছেন। কবিতা ও গানে তুলে ধরেছেন প্রেম, দ্রোহ ও মানবতার কথা। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষকে স্থান দিয়েছেন। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। দ্রোহ, প্রেম, মানবতার কবি ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৯ ইংরেজি ও ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। একাধারে তিনি ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও সৈনিক। সাহিত্যের সব শাখায় তার বিচরণ থাকলেও নজরুল ইসলাম মূলত কবি হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন। বাংলা কবিতায় নতুন ধারার জন্ম দেন কাজী নজরুল। কবিতার পাশাপাশি তিনি প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন; যেগুলো নজরুলসংগীত নামে পরিচিত। কবির ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে তিনি পিতৃহারা হন। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কবিকে কাজে নামতে হয়। লোকসংগীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে শৈশবেই একটি লেটো গানের দলে যোগ দেন দুখু মিয়া। সেই অল্প বয়সেই দলের জন্য তিনি বেশকিছু লোকসংগীত রচনা করেন। ১৯১৭ সালে সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯২০ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থাতে সংগীত ও সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু করেন। এ সময় তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে তার লেখা ছাপা হয়।

১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই বছরের মাঝামাঝি কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন নজরুল। আর এখানেই প্রমীলা দেবীর সঙ্গে প্রণয় থেকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সে বছরের ২১ নভেম্বর ভারতব্যাপী হরতাল ও অসহযোগের সময় রাজপথে নেমে আসেন কবি। পরের বছর ১৯২২ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে সারা ভারতীয় সমাজে সাড়া ফেলে দেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২২ সালের ১২ আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯২২ সালে পত্রিকাটির ৮ নভেম্বরের সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

একই বছরের ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে কবিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে এক জবানবন্দি দেন। তার এই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে রাজবন্দীর জবানবন্দী নামে বিশেষ সাহিত্য মর্যাদা লাভ করেছে। ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ১৯৪২ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারান কবি। ভারত সরকারের সম্মতিতে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে কবিকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায়, কবর দিও ভাই/যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই’। কবির এই ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর