বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

রাজস্ব আহরণে শুধু করদাতার সংখ্যা বাড়ালেই হবে না

আলী রিয়াজ

রাজস্ব আহরণে শুধু করদাতার সংখ্যা বাড়ালেই হবে না

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেছেন, রাজস্ব আহরণে অনেক বড় লক্ষ্যমাত্রা ছিল চলতি বছর। আগামী বাজেটে এটা আরও বড় আকারের হবে। কিন্তু এই আকার সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করে। ফলে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কর প্রদানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করলেই হবে না, মানসম্পন্ন কিনা অথবা তারা প্রকৃত করদাতা হওয়ার যোগ্য কিনা সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। আগামী বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। আবদুল মজিদ বলেন, চলতি অর্থবছরে দেখা গেছে, কর প্রদানকারীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ানো হয়েছে সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়। যারা প্রকৃত কর প্রদানের যোগ্য তাদের করের আওতায় নিয়ে আসা যাচ্ছে না। যারা মাসে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় করেন তাদের করের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের সংখ্যাই এখানে বেশি। ফলে রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটা পূরণ সম্ভব নয়। ব্যক্তি করদাতা খুঁজে বের করতে হবে যারা প্রকৃত অর্থে কর দিতে পারেন। ১৬ হাজার টাকা আয় করে সর্বনিম্ন কর দিতে হবে। তাতে লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। তিনি বলেন, ভ্যাট বা মূসক নির্ধারণের ক্ষেত্রেও আরও সতর্ক হতে হবে। ছোট দোকানদারদের ওপর মূসক আরোপ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা যায় না। যেখানে সত্যিকার অর্থে মূল্য সংযোজন হয় সেখানে যেতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর মূসক আরোপ করলে সেটা সাধারণ মানুষের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। তাই কোথায় মূসক আরোপ করা হবে কোথায় কতটুকু ছাড় দিতে হবে সেটা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত আগামী বাজেটে। যারা দাবি করছে মূসক প্রত্যাহারের তাদের দাবি যেমন শুনতে হবে। কিন্তু সেই দাবিটা যেন একতরফা না হয়। তাদের কাছ থেকেও কোন খাতে মূসক আরোপ করা যায় সেটা শুনতে হবে। উৎস খোঁজার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, যারা মূসক দেবে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আহরণের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উেস কর কাটা হচ্ছে। এখন যাদের অ্যাকাউন্ট থেকে উেস কর কাটা হচ্ছে তাদের হিসাবে গড়মিল আছে। দেখা যাচ্ছে অনেক সময় গ্রাহকদের দুবার কর দিতে হচ্ছে। যদি করদাতা না হয় তাহলে সেটা রাজস্ব নয়। অথচ সঞ্চয়পত্র থেকে বা এফডিআর থেকে যে উেস কর কাটা হয় সেটা রাজস্ব হিসেবে ধরা হচ্ছে। এভাবে করদাতার সংখ্যা নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি আছে। এই বিভ্রান্তি কাটিয়ে সঠিক করদাতা খুুঁজে বের করতে হবে এনবিআরকে। নইলে প্রতি বছর কর লক্ষ্যমাত্রা ও আদায় স্থায়ী কোনো কাঠামোর মধ্যে আনা যাবে না। একদিকে সংখ্যা বৃদ্ধি করলাম আর রাজস্ব আদায় করলাম ভিন্ন পদ্ধতিতে সেটা রাজস্ব নয়।

সাবেক এই সচিব বলেন, কর আদায়কারী ও করদাতাদের মনোভাবে যদি পরিবর্তন না আসে তাহলে আইন সহজ করে এবং কর প্রদানের কাজ সহজ করেও রাজস্ব আদায়ে উন্নতি হবে না। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ কর প্রদানে সবাইকে উৎসাহিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা একটি ভালো পদক্ষেপ। তবে করদাতারা যখন কর দিতে যাবেন তখনও তাদের সঙ্গে কর আদায়কারীদের ভালো আচরণ করতে হবে।  বিশিষ্ট অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ইতিমধ্যে এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরে এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে এখনো সঠিক কিছু বলা যাচ্ছে না।

অধিকাংশ বছর দেখা যায় অর্থবছরের শেষ সময় এডিপি অর্থ খরচ করা হচ্ছে। সারা বছর না করে শেষ সময় এসে এতে অনেক অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কঠোর পদ্ধতি অনুসরণ করে অর্থছাড় করতে হবে। যে এডিপি ঘোষণা করা হয়েছে সেটা কতটা বাস্তবসম্মত সেটা নির্ভর করবে সরকার কতখানি আন্তরিক তার ওপর। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক সম্পর্কে সরকারকে বড় ধরনের সংস্কার নিয়ে আসতে হবে। এই বছর সরকার ব্যাংক ঋণ কম নিয়েছে। সঞ্চয়পত্রের ঋণ বেশি হয়েছে। এখন ব্যাংক ঋণ কম নিয়েছে এর অর্থ এটা নয় যে, সেটা কমেছে। অর্থবছরের শেষ মাসে দেখা যাবে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। তার মানে শেষ মাসে অর্থ ছাড়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই অর্থ কোন প্রকল্পে যায়, কোন খাতে ব্যয় হয় সেটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এনপিএল বাড়ছে। সরকারকে এটা নিয়ন্ত্রণ ও কঠোর জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। ব্যাংকের পরিস্থিতি খারাপ হলে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর তার প্রভাব পড়ে। আর্থিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সর্বশেষ খবর