বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
জবাবদিহিতা

ডিএমপির ফোর্স ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে

মো. আছাদুজ্জামান মিয়া

ডিএমপির ফোর্স ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে

কার্যকর ও যুগোপযোগী কৌশলগত পরিকল্পনা এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কাঠামো শক্তিশালী করে কর্মক্ষেত্রে পুলিশের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার বিষয়কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে। কর্মরত জনবল, বিদ্যমান যানবাহন ও সাজসরঞ্জামাদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের শৃঙ্খলার পাশাপাশি তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং দক্ষতার সঙ্গে তাদের পরিচালনার মাধ্যমেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাঙ্ক্ষিত ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী মহল কর্তৃক নজিরবিহীন সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যরা কঠোর ও অনড় অবস্থান গ্রহণ করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করায় ঢাকা মহানগর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত জনবল, বিদ্যমান যানবাহন এবং সাজসরঞ্জামাদির যথাযথ ব্যবহার ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার মাধ্যমে কাজের গতিকে ত্বরান্বিত করে একটি টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি।  ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের যথাযথ ব্যবহার, পারস্পরিক সমন্বয় সাধন, সমদায়িত্ব পালন, বিশ্রাম ও কল্যাণ নিশ্চিত করে কার্যকর ফোর্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সব থানা, ফাঁড়ি, সব সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয় এবং সব বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়সহ এর যথাযথ বাস্তবায়ন ও নিবিড় তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট প্রধানকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত অফিসার ও ফোর্স, ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার, এপিবিএন বা অন্যান্য ফোর্সের (যদি থাকে) সুষ্ঠু সমন্বয় করে কার্যকর ফোর্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সার্ভিস প্রদান ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্মরত অফিসার ও ফোর্সদের সর্বোচ্চ সংখ্যক অপারেশনাল ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরাধ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক অধীনস্থ থানা ফাঁড়ির ফোর্স এবং তাদের অধীনস্থ ইউনিটে কর্মরত অঙ্গীভূত আনসার/ব্যাটালিয়ন আনসার/এপিবিএন ইত্যাদি ফোর্সের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা নিবিড়ভাবে যাচাই করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফোর্স ও অফিসারের পুনঃপুনঃ দায়িত্বে নিয়োজিতকরণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আউটপুট পাওয়ার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো কর্তব্যে নিয়োজিত অফিসার ও ফোর্স যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা তা সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা নিবিড়ভাবে তদারকি করছেন। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউনিটে কর্মরত অফিসার ও ফোর্সদের নিয়মিতভাবে উদ্বুদ্ধ করছেন এবং দায়িত্বে নিয়োজিত করার আগে যথাযথ ব্রিফিং প্রদান করছেন। ইউনিট ইনচার্জরা ইউনিটে কর্মরত অফিসার ও ফোর্সদের ছুটি প্রদান, বিশ্রাম ও কল্যাণ মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। অফিসার ও ফোর্সদের কল্যাণ শতভাগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের দিবা ও নৈশকালীন কর্তব্যে নিয়োজিতকরণ জুডিশিয়াসলি করা হচ্ছে, যাতে করে পুলিশ সদস্যদের একনাগাড়ে নৈশকালীন দায়িত্ব পালন করতে না হয়। পুলিশ সদস্যদের একনাগাড়ে অপারেশনাল দায়িত্বে নিয়োজিত করা হচ্ছে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কমিউনিটির সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং অত্যন্ত জোরদার করা হয়েছে। এ কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে মেলবন্ধন প্রতিষ্ঠা। তাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নীতিগতভাবে মাঠভিত্তিক, জনবান্ধব এবং গণমুখী পুলিশি ব্যবস্থাপনার প্রচলন করেছে। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে একটি সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত পরিবর্তন সূচিত হয়েছে— ‘বল প্রয়োগ’ থেকে ‘সেবা’। জনগণকে প্রকৃত সেবা প্রদান করতে হলে একমাত্র উপায় হলো মাঠভিত্তিক পুলিশি ব্যবস্থা। ঔপনিবেশিক পুলিশি ব্যবস্থাকে সমসাময়িক কালের উপযোগী করে রিঅ্যাকটিভ পুলিশি ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিং চালু হয়েছে। তাই পুলিশ সদস্যদের অধিকহারে অপারেশনাল কাজে নিয়োজিতকরণের মাধ্যমেই প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিং সফলতা লাভ করতে পারে।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিওএম পুলিশ লাইনস, ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি পুলিশ লাইনস, ট্রাফিক ব্যারাক, থানা, ফাঁড়ি সব ইউনিটে পুলিশ সদস্যদের আবাসন, খাদ্য, ছুটি, ভাতাদি, বিনোদন, বিশ্রাম, পুরস্কার, চিকিৎসা, যথাযথ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার এবং রান্নাঘর নির্মাণ, সংস্কার, পুনঃসজ্জিতকরণ ইত্যাদি যাবতীয় কল্যাণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। অপরাধ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিয়মিত, নিরবচ্ছিন্ন, নিবিড় ও ব্যক্তিগত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। নাগরিকদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পুলিশি কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে যে কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে যথাযথ ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন কার্যক্রম ও উঠান বৈঠক পরিচালনার মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য সক্রিয় এবং আন্তরিক। ফলে ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে অন্যান্য যে কোনো সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। লেখক : কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

সর্বশেষ খবর