শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগর নিয়ে চুক্তি চায় রাশিয়া

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বঙ্গোপসাগর নিয়ে চুক্তি চায় রাশিয়া

বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে আগ্রহী রাশিয়া তার জাহাজ নিয়ে অবাধে বঙ্গোপসাগরে ঢুকতে চাইছে। মস্কোর এই আগ্রহকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে ঢাকা। দ্বিপক্ষীয় সামুদ্রিক যোগাযোগ (মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট) চুক্তির একটি খসড়া নিয়ে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র ও নৌ মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগর ঘিরে পৃথকভাবে ব্লু ইকোনমি চুক্তির বিষয়েও আলোচনা চলছে দুই পক্ষের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সূত্রগুলো জানায়, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এরই মধ্যে চুক্তির একটি খসড়াও পাঠিয়েছে রাশিয়া। ‘বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিউপিল রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অন কো-অপারেশন ইন দ্য ফিল্ড অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট’ শীর্ষক এ চুক্তি কার্যকর হলে যুদ্ধজাহাজ এবং সরকারের অবাণিজ্যিক কার্যক্রমে পরিচালিত জাহাজ, প্রমোদতরী ও ক্রীড়া ভেসেল ছাড়া রাশিয়ার সব ধরনের জাহাজ বঙ্গোপসাগরে ঢুকতে পারবে। এসব জাহাজ বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অবাধ সুযোগ পাবে। অবশ্য চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশও রাশিয়ায় একই ধরনের সুবিধা লাভ করবে। ব্লু ইকোনমি এবং মেরিটাইম বিষয়ে এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। আগ্রহ আছে প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানেরও। উপরন্তু একই বিষয়ে এমওইউ স্বাক্ষরের প্রস্তাব পাওয়া গেছে চীনের কাছ থেকেও। এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ব্যাপারেও প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। এ ধরনের প্রস্তাবের মধ্যেই বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও সম্পর্ক উন্নয়নে শক্তিশালী রাশিয়ার এ আগ্রহের বিষয়টিকে অবশ্য ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাশিয়ার পক্ষ থেকে মেরিটাইম সহায়তার বিষয়ে চুক্তির প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আমাদের সামুদ্রিক সম্পর্ক আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে আমরা যে কোনো দেশের সঙ্গে মেরিটাইম চুক্তি করতে আগ্রহী।’ জানা গেছে, মেরিটাইম চুক্তি বিষয়ে রাশিয়ার পাঠানো খসড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের ৭ তারিখে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধির মতামত জানতে চাওয়া হয়। এর আগে গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এম জাকিউর রহমান ভূঁইয়া নৌপরিবহন সচিব অশোক মাধব রায়ের কাছে একটি চিঠি পাঠান। সাত পৃষ্ঠার মতামতসহ ওই চিঠিতে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে মেরিটাইম উন্নয়নে বাংলাদেশের কী কী উপকরণ লাগবে সে বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়ার সুপারিশ করেন।

সূত্র জানায়, গত বছর ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ‘কো-অপারেশন ইন দ্য ফিল্ড অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট’ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। সভায় মেরিটাইম টান্সপোর্ট এবং ব্লু ইকোনমিসহ একটি সার্বিক চুক্তি/এমওইউ স্বাক্ষরের বিষয়ে ইতিবাচক মতামত প্রদান করা হয়। পরে ঢাকার রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিবের সঙ্গে খসড়া চুক্তির বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের নতুন নতুন সমুদ্র অঞ্চল অর্জনের প্রেক্ষিত বিবেচনায় মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট চুক্তি ছাড়াও ব্লু ইকোনমি সেক্টর নিয়ে আলাদা একটি এমওইউ স্বাক্ষরের অনুরোধ জানান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত। এদিকে রাশিয়া ‘মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট’ চুক্তির যে খসড়া ঢাকায় পাঠিয়েছে, তাতে (আর্টিকেল-৮) উল্লেখ আছে : দুই দেশের মধ্যে একটি দেশের ‘ট্রান্সপোর্ট’ তৃতীয় কোনো দেশে অবস্থানরত ওই দেশের জাহাজ বহরে যোগ দেওয়ার জন্য অথবা জাহাজ পরিবর্তনের জন্য অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে ট্রানজিট সুবিধায় আরেক দেশের ‘টেরিটরি’ ব্যবহারের সুযোগ পাবে। শুধু তা-ই নয়, এ ধরনের টেরিটরি সুবিধা নেওয়ার সময় জাহাজে অবস্থানকারী নাবিকরা চুক্তিবদ্ধ দেশের বন্দর-সংলগ্ন শহরে বিনা ভিসায় অবস্থান করতে পারবেন। এমনকি এ অবস্থায় কোনো নাবিক অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসাকালীন সময় পর্যন্ত তাকে/তাদের অবস্থানের সুযোগ অথবা সংশ্লিষ্ট নাবিক বা নাবিকদের অন্য কোনো দেশে নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে সীমানা পেরোনোর সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে। একটি দেশের জাহাজ চুক্তিবদ্ধ অপর দেশের সীমানায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা সমস্যায় পড়লে স্বাগতিক দেশ সব ধরনের সহায়তা দেবে। আর এ ধরনের সহায়তার সময় জাহাজ অবস্থানকালে কোনো ধরনের শুল্ক বা সার্ভিস চার্জ বা অন্য কোনো ধরনের কর আরোপ করা যাবে না।

সর্বশেষ খবর