শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসির ডাকে সাড়া নেই কোনো দলের

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নীতিমালা সংশোধন

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চেয়েও সারা পায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-বিএনপি নানা প্রশ্ন তুললেও তারাও পর্যবেক্ষক নীতিমালায় সংশোধনের বিষয়ে কোনো মতামত দেয়নি ইসিকে। এমনকি অনেক বড় দল মতামত দেওয়ার বিষয়টি জানে না বলেও জানিয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন—ইসির পক্ষ থেকে মতামত আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ইসির ওয়েবসাইটে পর্যবেক্ষক নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছিল। গত বুধবার মতামত দেওয়ার সময়ও শেষ হয়েছে। কিন্তু কোনো দলের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া   যায়নি। যদিও দলগুলো পর্যবেক্ষক সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক বার প্রশ্ন তুলেছে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি পর্যবেক্ষক সংস্থা ইসির কাছে মতামত দিয়েছে বলে জানা গেছে। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, দলগুলো সব কিছুতেই রাজনীতি করতে চায়। তারা সমালোচনা করতে পারে কিন্তু মতামত দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ নেই। তারা হয়তো চায় না পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। গত ১৭ মে কমিশন তার ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত নীতিমালা ও এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায়ের মতামত আহ্বান করা হয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা (স্থানীয় পর্যবেক্ষক) সংশোধনের বিষয়ে মতামত দিতে গত ২৪ মে পর্যন্ত সময় দেয় ইসি। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। সেই সঙ্গে সুশীল সমাজের কাছ থেকেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে কয়েকটি পর্যবেক্ষক সংস্থা তাদের মতামত দিয়েছে। সেগুলোও অনেকটাই দায়সারা গোছের। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, কোনো দলের মতামত পাওয়া যায়নি। তবে কিছু সংস্থার মতামত পেয়েছি।  আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় সংশোধনী আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল বা কোনো অঙ্গসংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের পর্যবেক্ষক হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিবন্ধিত পর্যবেক্ষণ সংস্থার মেয়াদ শেষ হলেও ভোট পর্যবেক্ষণ করতে কোনো বাধা থাকবে না। পর্যবেক্ষকরা ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম দেখলেই তাত্ক্ষণিকভাবে তা ইসির কাছে রিপোর্ট করতে পারবে এবং নির্বাচন কমিশনও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এসব নতুন বিধান যুক্ত করে একটি খসড়া পর্যবেক্ষণ নীতিমালা তৈরি করেছে ইসি সচিবালয়।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় সংশোধনী : ৪.৫ এর (ক) ধারায় সংশোধন আনা হচ্ছে। এ ধারায় ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন (পর্যবেক্ষণ অনুমতির বিষয়ে) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার, সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থাকলেও তা সংশোধন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদনের জন্য সাত কর্মদিবসের বেশি সময় প্রয়োজন হয় বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। ৪.৬ ধারায় নিবন্ধনের মেয়াদের ক্ষেত্রে একটি শর্ত রাখা হচ্ছে—তা হলো-‘তবে শর্ত থাকে যে, নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হইয়া যাওয়ার পরও কোন কারণে নতুন করিয়া নিবন্ধন করা সম্ভব না হইলে কমিশন নিবন্ধিত সংস্থাসমূহের নিবন্ধনের মেয়াদ প্রয়োজন অনুযায়ী বৃদ্ধি করিতে পারিবে।’ এ বিষয়ে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হলেও নির্ধারিত সময়ে কখনো কখনো নতুন করে নিবন্ধন সম্ভব হয় না, যাতে নিবন্ধন না থাকার কারণে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হতে বিরত থাকতে না হয় সেই জন্য এই বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। ভোটের তফসিল ঘোষণার পরে পর্যবেক্ষণের আবেদন করার সময়সীমা ১০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকের যোগ্যতায় নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে—বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল বা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত কেহ নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে পারবেন না। এ ছাড়াও বিধি ধ অনুচ্ছেদে যুক্ত করা হয়েছে একটি নতুন বিষয়। বলা হয়েছে—‘নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত পর্যবেক্ষকগণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের অনিয়ম যা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য হুমকি হতে পারে, দেখতে পেলে সে বিষয়ে তাত্ক্ষণিক নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট প্রদান করিতে পরিবে।’ উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা ১২০। ২০১১ সালে এগুলো নিবন্ধিত হয়। নিবন্ধনের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। এরপর নতুন করে নিবন্ধিত হওয়ার দরখাস্ত আহ্বান করবে কমিশন। এর আগেই পর্যবেক্ষণ নীতিমালা সংশোধন করা হবে।

সর্বশেষ খবর