শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

গোখরায় মুদ্রার হাতছানি

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

গোখরায় মুদ্রার হাতছানি

দেশের কয়েকটি এলাকায় এখন গোখরা সাপের খামার গড়ে উঠেছে। আর তাদের দেখাদেখি ভাওয়াল এলাকা খ্যাত গাজীপুরের কাপাসিয়ার বরুণ গ্রামে প্রদীপ দাস গড়ে তুলেছেন গোখরার খামার। এখানে রয়েছে গোখরার তিন প্রজাতির ২৫টি সাপ। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও কলেজছাত্র প্রদীপ দাস ও তার দুই বন্ধু মিলে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন সাপের এই খামার। প্রদীপের এই খামারের সাপের বিষ প্রক্রিয়াজাত করে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটুখানি নজর দিলেই অপার সম্ভাবনাময় এই সাপের খামার (শিল্প) দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর বিদেশ থেকে ৭-৮ হাজার কোটি টাকার বিষ আমদানি করা হয়ে থাকে। দেশে যদি সাপের খামার গড়ে তোলা হয় তাহলে আর বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। এতে বছরে বেঁচে যাবে ৭-৮ হাজার কোটি টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে বরুণ গ্রামে ৫ বাই ৫ ফুটের দুটি পাকা ঘরে চলছে প্রদীপদের সাপ লালন-পালন। একেক সাইজের এবং একেক প্রজাতির সাপগুলো রাখা হয়েছে আলাদা। সাপগুলো এমনভাবে পেঁচিয়ে মেঝেতে পড়ে আছে, যা দেখলে গা শিহরে ওঠে। সংরক্ষিত হওয়ার পরও অনেক দর্শনার্থী উঁকি মেরে সাপ দেখে কৌতূহল মেটান। ব্যতিক্রমী এই সাপের খামারের উদ্যোক্তা প্রদীপসহ তিনজন। অন্য দুজন একই গ্রামের মাসুদ ও কাউসার। তারা এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন সাপের খামার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামে একটি সংগঠন। প্রদীপ দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে তিন বন্ধু কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে তারা ব্যতিক্রমী এই সাপের খামার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে সাভারের বক্তাপুর বেদেপল্লী থেকে ছয়টি গোখড়া সাপ কিনে আনেন তারা। একেকটি সাপ ৭০০ টাকায় কেনা হয়। পরে তিন বন্ধু বিভিন্ন সময় নানা এলাকা থেকে এমন আরও অনেক সাপ খুঁজে আনেন। এভাবে একটি-দুটি করে ২৫টি সাপ সংগ্রহ করেন তারা। প্রদীপদের সাপের খামারে এরই মধ্যে ২০টি ডিম দিয়েছে গোখরা সাপ। কিন্তু একটি ডিমও ফোটেনি। তারা অপেক্ষায় আছেন কবে ফুটবে এই ডিমগুলো। চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সাপের খামার। এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা তাদের এই সাপ পালনে উৎসাহ জোগাচ্ছেন বলে জানান প্রদীপ দাস। প্রদীপের বন্ধু মাসুদ বলেন, খামারের সাপের প্রধান খাবার ইঁদুর, ব্যাঙ, মুরগির বাচ্চা ও ডিম। এসব খাবার সংগ্রহ করতে লোকবল ও অর্থের দরকার। কিন্তু খামার থেকে কোনো আয় না হওয়ায় কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, এই প্রাণী যে কোনো সময় যে-কাউকে দংশন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা সাবধানতা অবলম্বন করছেন বলে তিনি জানান। খামারি কাউসার বলেন, সরকারি নীতিমালা থাকলেও তারা এর অনুমোদন পাচ্ছেন না। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি নিজে কয়েকবার প্রদীপের সাপের খামার পরিদর্শন করেছি। অনুমোদনের জন্য আমরা সহযোগিতা করছি।’ তিনি বলেন, দেশে সাপের বিষের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সাপের খামার করতে উৎসাহিত ও পৃষ্ঠপোষণ করা হলে দেশের মুদ্রা সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে খামারিরা হবে লাভবান। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাকছুদুল ইসলাম বলেন, সাপের খামার ব্যতিক্রমী ব্যবসা। ব্যতিক্রমী এই সাপখামারিদের উৎসাহিত ও সহায়তা করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর