শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

কৃষি প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ চাই

রুহুল আমিন রাসেল

কৃষি প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ চাই

আবদুল আউয়াল মিন্টু

আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থা ও সব ধরনের অবকাঠামোগত খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তার মতে, নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। কারণ ভ্যাটের পরিধি বাড়ছে। এটা বাজেটে নতুন মাত্রা যোগ করবে। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও রোডের অ্যাংকর টাওয়ারের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাল্টিমুড গ্রুপের কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, কৃষিতে প্রযুক্তির নির্ভরশীলতা বাড়াতে পারলে উৎপাদন বাড়বে। আর যখন কৃষি প্রযুক্তিনির্ভর হয়, তখন জনবলও কম লাগে। সেই জনবলের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে শিল্পায়নের দিকে ঝুঁকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আবার শিল্পায়নের প্রতিও নজর বাড়াতে হবে। এখন থেকে ২০ বছর আগে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল ছিল। এ হার এখন ৪৮ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। বাকি ২০ শতাংশ বা ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কিন্তু বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। এই বিনিয়োগের একটা অংশ সরকারকে করতে হবে। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। গত কয়েক বছরে এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বিদ্যুতে আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার। গ্যাস উৎপাদনে আরও বিনিয়োগ দরকার।

এফবিসিসিআইর সাবেক এই সভাপতির মতে, বিনিয়োগ বাড়াতে সমাজে যে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিদেশিরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা পেলেই বিনিয়োগে আসবেন। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। রাজনীতির জন্য পুলিশ ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা যাবে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা দেখেই বিনিয়োগ আসবে। তার মতে, বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো— যে ব্যয়ের কথা বলা হয় তা কোন খাতে বেশি, কতটুকু উন্নয়ন খাতে খরচ করা হয়। মূলত ভবিষ্যতের জন্য যে বিনিয়োগ করা হয় তা-ই গুরুত্বপূর্ণ।

কৃষি খাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৫০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক কৃষিনির্ভর ছিল। তখন কৃষি খুব গুরুত্বপূর্ণ খাত ছিল। তখন জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৬০ শতাংশ। এখন কৃষির অবদান দিন দিন কমতে কমতে বাংলাদেশের জিডিপিতে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘দুনিয়ার সব গরিব দেশগুলোতে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আমরাও ব্যতিক্রম হতে পারব না। এ তিন খাতে যত বেশি বিনিয়োগ হবে, সরকার যত বেশি গুরুত্ব দেবে, তত বেশি ভবিষ্যতে সুফল মিলবে। দেশের মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটবে। আমাদের কৃষি খাতে সরকারি খরচ বেশি যায় ভর্তুকিতে। কৃষিঋণ তো স্বাভাবিক বিষয়। এটা কোনো বিনিয়োগ নয়।’ দেশের এই খ্যাতনামা ব্যবসায়ীর মতে, ‘বাংলাদেশে বাজেট নিয়ে যেভাবে হইচই হয়, বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন হয় বলে আমার জানা নেই। এমনকি প্রতিবেশী ভারত ও নেপালে বাজেট পেশ, পাস ও বাস্তবায়ন হয় বছরের পর বছর। কিন্তু কোনো হইচই হয় এমন কিছু শোনা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে বাজেট পেশকে রাজনৈতিকীকরণ করা হয়েছে। বাজেট রাজনৈতিক হলেও এটা অর্থনৈতিক দলিল এবং সরকারের বার্ষিক আয় ও ব্যয়ের হিসাব। একমাত্র বাজেটের মাধ্যমেই কিছু রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। বস্তুত বাজেট আয় ও ব্যয়ের বিবরণী।

সর্বশেষ খবর