শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

ভ্যাটের নামে নিপীড়নমূলক কর ব্যবস্থা নয়

রুহুল আমিন রাসেল

ভ্যাটের নামে নিপীড়নমূলক কর ব্যবস্থা নয়

এ কে এম শাহেদ রেজা শিমুল, পরিচালক, এফবিসিসিআই

আগামী বাজেটে নতুন মূল্য সংযোজন কর-মূসক বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের নামে যেন কোনো ধরনের নিপীড়নমূলক রাজস্ব ব্যবস্থা মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়, সে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই পরিচালক এ কে এম শাহেদ রেজা শিমুল। তার দাবি—ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে প্যাকেজ ভ্যাট প্রথা বহাল রাখতে হবে। আসছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেজা গ্রুপের শাহেদ রেজা শিমুল চেয়ারম্যান সরকারের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, বিগত ১৯৯০ সাল পরবর্তী সময়ে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পায়ন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা যেন কোনোভাবেই দুর্বল না হয়। দেশীয় শিল্প সুরক্ষা ও বিকাশের জন্য যে সমস্ত সম্পূরক শুল্ককর ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, একজন শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারের কাছে আমার দাবি থাকবে, বাজেটের পর দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যাতে না বাড়ে, সে নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। শিল্পবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব ও বিনিয়োগ বান্ধব বাজেট চাই। আশা করি, এবারের বাজেট বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক গতিকে এবং দেশের চলমান অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করবে। এই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা আরও বাড়বে এবং নিশ্চিত হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। মূল্যস্ফীতির মাত্রা থাকবে সহনীয়, বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতি। নতুন বাজেটে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় মৌলিক নীতিমালা সম্পর্কিত প্রস্তাবে বেসরকারি মার্কেন্টইল ব্যাংকের এই ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা হোক। উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিবেচনা করা হোক। ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হারে জাতীয় বাজেটে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সীমাবদ্ধ রাখার দাবি করছি। কারণ, কোনো অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ সেই বছর অর্জিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আনুপাতিক হারে সরাসরি সম্পর্কিত। এটা না করতে পারলে অতিরিক্ত করভারে শিল্প বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। করহার কমিয়ে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়ানোর কৌশলগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তার মতে, দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বর্ধিত হারে উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সব পণ্যের ওপর শূন্য শতাংশ এবং এক শতাংশ শুল্কহার অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। দেশীয় শিল্পের স্বার্থে সম্পূরক শুল্ককর অব্যাহত রাখা অথবা সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে সর্বোচ্চ হারে রেক্সলেটরি ডিউটি আরোপ করতে হবে। শাহেদ রেজা শিমুল বলেন, করদাতাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কর ও সারচার্জ আরোপের লক্ষ্যে ব্যক্তিগত আয়করের করমুক্ত সীমা, কর ও সারচার্জের হারসমূহ পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। ব্যক্তিগত করভার কমালে সম্পদ ও মূলধন পাচারের প্রবণতা কমবে। সঠিক আয় প্রদর্শনে উৎসাহিত হবেন করদাতারা। এতে দেশে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বাড়বে। সরকারও অধিক রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হবে। তাই করদাতাদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা শনাক্তকরণের কার্যক্রম বাড়ানোর দাবি করছি।

দেশের খ্যাতনামা এই ব্যবসায়ী নেতার মতে, দণ্ডসুদ আরোপের বিধানসমূহ পর্যালোচনা এবং করদাতাদের হয়রানিমুক্ত কর প্রদানে উৎসাহিত করবে। করদাতাদের হয়রানি কমাতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেওয়া আয়কর রেয়াত ও অব্যাহতিসমূহ আয়কর আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অর্থনীতিতে অধিকতর কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজন করার লক্ষ্যে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে উৎসাহিত ও প্রবাহিত করার জন্য প্রতিবেশী বা নিকট প্রতিবেশী দেশসমূহের কর্পোরেট আয়কর হারের সমপর্যায়ে কর্পোরেট হার নির্ধারণ করার দাবি করছি। এ ক্ষেত্রে দ্রুত এবং দক্ষ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে আয়কর অ্যাসেসমেন্ট ও আপিল কার্যক্রম পর্যালোচনা বা পুনঃপরীক্ষাকরণ এবং নিরপেক্ষ আপিল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। পোশাক শিল্প খাতের অন্যতম রপ্তানিকারক এ কে এম শাহেদ রেজা শিমুল মনে করেন, দেশে মূলধনী বিনিয়োগকে উৎসাহিতকরণ এবং সম্পদ ও মূলধন পাচার প্রতিরোধ করণকল্পে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির ও ভবিষ্যৎ রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে শিল্প ও গৃহনির্মাণ খাতে বিনিয়োগ প্রবাহিত করার লক্ষ্যে প্রণোদনার সুযোগ রাখা ও কর রেয়াত প্রদান করা উচিত। আর পশ্চাত্পদ এলাকা ও অগ্রাধিকারমূলক খাতসমূহে বিশেষ করে বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট, পরিবেশ রক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রম, কৃষি ও গ্রামীণ শিল্প প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র পোলট্রি, হ্যাচারি, দুগ্ধ শিল্প ইত্যাদি খাতে রেয়াতি কর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র  ও মাঝারি শিল্প খাতে প্রণোদনা ও বিকাশের লক্ষ্যে অধিকতর কম করহার ব্যবস্থা থাকা উচিত।

সর্বশেষ খবর