রবিবার, ২৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

কর্মসংস্থান শিক্ষায় অগ্রাধিকার প্রয়োজন

রুহুল আমিন রাসেল

কর্মসংস্থান শিক্ষায় অগ্রাধিকার প্রয়োজন

কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)-এর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ। তার মতে, সবচেয়ে বড় দরকার কর্মসংস্থান। এজন্য লাগবে বিনিয়োগ। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘কর্মসংস্থানের  জন্য দক্ষ জনসম্পদ বাড়াতে হবে। আর দক্ষ জনসম্পদ হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। এটা হলে দারিদ্র্য বিমোচন সহজ হবে। তাই সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে— দক্ষ জনসম্পদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন।’ আসছে বাজেটে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এ চার খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ প্রদানের তাগিদ দিয়ে কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ তৈরি হয়, কিন্তু সঞ্চালন লাইনের অভাবে ঘরে ঘরে পৌঁছায় না। বাজেটে এই পরিস্থিতি উত্তরণে পদক্ষেপ চাই।’ দু-এক দিন আগে চট্টগ্রামে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের অবস্থা খুবই শোচনীয় ও ভয়াবহ।’ এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ‘এ সরকার ব্যবসা ও ব্যবসায়ী বান্ধব। তাই সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে ব্যবসায়ীদের জন্য সুনজর আছে। ব্যবসায়ীদের সহায়তা নিয়েই সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর বাজেটের আকার যেমন বাড়ছে, তেমনি রাজস্বও বাড়ছে। তবে এবার আশার কথা হলো, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার সবচেয়ে ভালো। এমন প্রেক্ষাপটে এবারও উন্নয়নবান্ধব বাজেট হবে বলে আশা করছি।’ কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, ‘সরকার আগামী অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে, তা বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে চাপ দিয়ে কর আদায় করা যাবে না। কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এই সরকার ২০০৯ ও ২০১৪ সালে পরপর দুই দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর যেসব বাজেট দিয়েছে, দেশের ব্যবসায়ীরা তা ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। অতীত বাজেটের ধারাবাহিকতায় এবারও উন্নয়নমূলক বাজেট সমগ্র দেশবাসীর মতো আমিও প্রত্যাশা করছি।’ বেসরকারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায় প্রতি বছরই বাড়ছে। নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ককর আইন বাস্তবায়নের আগে হার কমাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশি শিল্প সুরক্ষা দিয়ে বাজেট তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন বলে আমরা শুনেছি। এটা ভালো উদ্যোগ। কেননা বাজেট বাস্তবায়নে কর লাগে। কিন্তু চাপ দিয়ে রাজস্ব আদায় হবে না। আমরা পুরনোরাই বার বার কর দিই। নতুনরা কম দেন। কয়েক বছর আগে এনবিআর ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ৫০ লাখ নতুন করদাতা চিহ্নিত করেছে। আজও তাদের করজালের আওতায় আনতে পারেনি। তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের জোর দাবি করছি।’ এফবিসিসিআইর সাবেক এই সভাপতি নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ককর আইন প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করতে হবে। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ককর বা এসডি আমাদের জন্য দরকারি রাজস্ব। এসডি না থাকলে দেশি শিল্প সুরক্ষা পাবে না। ব্যবসায়ী সমাজের দাবি, সামর্থ্যের মধ্যে ভ্যাট চাই। ১৫ শতাংশ ভ্যাট খুব কম দেশেই আছে। অনেক দেশেই বহুস্তরের প্যাকেজ ভ্যাট চালু আছে। তবে কিছু দেশে ৮, ৯, ১০, ১২, ১৫ ও ১৭ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট আদায় করা হয়। তবে সেসব দেশের প্রতিটিতেই ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা রয়েছে।’ দেশে চলমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুফল কাজে লাগাতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর এখনই সুসময়। দারিদ্র্য বিমোচনে বিনিয়োগ দরকার। এজন্য ভৌত-অবকাঠামো খাতে নজর দিতে হবে বেশি। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানোর জন্য বিনিয়োগ হবে। যেভাবে দেশ এগোচ্ছে, যেভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে তা দেখে বিদেশিরা নিশ্চয়ই বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগ করবেনই না কেন, এখানে ১৬ কোটি মানুষ বসবাস করে। যুবশক্তি আছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে। কর্মঠ মানুষ আছে।’

সর্বশেষ খবর