সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে না : হানিফ

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে না : হানিফ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দলের মুখপাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে না। এই দল গণমানুষের রাজনৈতিক দল। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল। এ দল কখনোই অন্য দল বা জোট ভাঙা-গড়ায় বিশ্বাসী নয়। দলের আদর্শ ও নীতি প্রশ্নে জনগণের রায় নিয়ে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়েই ক্ষমতায় যাওয়ায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সম্প্রতি তার নিজ অফিসে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দিয়ে ২০ দলীয় জোট ভাঙার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ’—বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, তারা অমন অভিযোগ করতেই পারেন। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সামরিক আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেন। এরপর বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে নেতা বাগিয়ে এনে বিএনপি নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। নেতা কেনাবেচা করে দল করেন। ক্ষমতায় বসার পর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেব।’ জিয়া রাজনীতি শুধু কঠিনই করেননি, জটিল করে দিয়েছেন। কাজেই সে দলের নেতা-কর্মীরা দল ভাঙার অভিযোগ করবেই। একটা কথা পরিষ্কার বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনো দল ভাঙা-গড়ার খেলায় বিশ্বাস করে না। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিমত, যে কোনো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার অফিসে তল্লাশি চালানো দুঃখজনক। তবে আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে, দেশের জন্য যদি মনে হয়, যে কোথায়ও তল্লাশি চালানো প্রয়োজন, তাহলে সেটা করতে পারে। তিনি বলেন, এমনিতে বিএনপির অফিস নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল রয়েছে। কারণ এই অফিসে থেকেই ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানোর জন্য মানুষ হত্যার নির্দেশ দেওয়া ষড়যন্ত্রের ছক তৈরি করা হতো। একইভাবে এই অফিসে বসেই ২০১৩ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নামে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশনা দেওয়া হতো। ফলে প্রায় ২০০ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। সব দিক বিবেচনায় হয়তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কাছে তথ্য ছিল বলেই অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি নেত্রীর কার্যালয়ে অভিযানই প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র নেই—বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, তল্লাশি অভিযানের সঙ্গে গণতন্ত্রের কী সম্পর্ক। বিএনপি কী মনে করে, তারা আইনের ঊর্ধ্বে? দেশের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করতে পারবে না? তল্লাশির সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা বিএনপি নেতাদের মুখেই দেশবাসী প্রথম শুনছে। অন্যদিকে ২০০১ সালের পর আওয়ামী লীগ অফিসে পুলিশের তাণ্ডব চালানো হয়েছিল, তখন কী গণতন্ত্র ছিল? বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা—জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হানিফ বলেন, আমাদের দল বিশ্বাস করে সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন হতে হবে। এ কথা বিশ্বাস করে বলেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ করার জন্য। কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা নির্বাচনে আসেনি, কারণ তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অতীতের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে তারা খাতের কিনারে নিয়ে গিয়েছিল। তাই জনগণের কাছে যেতে ভয়। ভেবেছিল জয়লাভের সম্ভাবনা নেই। তারা সব সময়ই ষড়যন্ত্রকারী দল হিসেবে চিহ্নিত। জনগণের রায়কে ভয় পায়। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। ইদানীং তাদের কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় যে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরাও চাই সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যেন নির্বাচনে অংশ নেয়। ‘নির্বাচনে সহায়ক সরকার’ বিএনপির দাবির প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ বলেন, সহায়ক সরকার নয়, মূলত এর মাধ্যমে বিএনপি দরকষাকষি করছে। কারণ বিএনপি খুব ভালো করেই জানে, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে। সহায়ক সরকার হিসেবে তারা যেটা বলেছে—নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সব সময় নির্বাচন হয়। তখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সে সরকার শুধু নিয়মিত কাজগুলো করে। নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করে। মূলত সে সময় দায়িত্ব পালনকারী সরকারই সহায়ক সরকার। সে দিক থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে দলের তিনবারের নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দীর্ঘ আট বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক জায়গায় এমপিদের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায় দলে অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে। এসব নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ আছে। আমরা জেলা পর্যায়ে বলেছি, যাদের বিরুদ্ধে কাজের অনৈতিক অভিযোগ আছে, তাদের দলে নেওয়া যাবে না। অনেক জায়গায় এ নির্দেশনা শোনা হয়েছে। আমরা আরও কঠোর হচ্ছি। তবে নির্বাচনের আগে কোন্দল নিরসন হবে বলে মনে করেন তিনি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো মোকাবিলা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলে তা নিরসন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। উন্নয়নের জন্য আগামীতেও আওয়ামী লীগ সরকার দরকার—এটা মানুষকে বোঝাতে হবে। কুষ্টিয়া-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি হানিফ বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাকে হত্যা করা হয়। তিনি দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারেননি। কিন্তু জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশকে অথনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গত সাড়ে আট বছরে দেশ নিম্নমধ্যয় আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। দেশবাসীকে আহ্বান জানাই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। কারণ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বলেই দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর